R G Kar Hospital Incident

রাতের কাজও অধিকার, দাবি মহিলাদের অবস্থানে

রাতের কাজে মেয়েদের না-রাখার যে কথা সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছে, তারও প্রতিবাদ জানিয়ে সন্ধ্যায় মহিলাদের মিছিল হয়েছে হাতিবাগান থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪২
মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে ও রাতের কাজের নিরাপত্তার দাবিতে অবস্থান। শ্যামবাজারে।

মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে ও রাতের কাজের নিরাপত্তার দাবিতে অবস্থান। শ্যামবাজারে। —নিজস্ব চিত্র।

মেয়েদের নিরাপত্তার দাবিতে এবং রাতের কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ কমানোর সরকারি ঘোষণার প্রতিবাদে এ বার রাতভর অবস্থান হল শহরে। আর জি কর-কাণ্ডে ন্যায়-বিচারের দাবির পাশাপাশিই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুর্নীতির ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙা এবং মেয়েদের কাজের নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার শ্যামবাজারে বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে ভোর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত ওই অবস্থানের ডাক দেওয়া হয়েছিল। রাতের কাজে মেয়েদের না-রাখার যে কথা সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছে, তারও প্রতিবাদ জানিয়ে সন্ধ্যায় মহিলাদের মিছিল হয়েছে হাতিবাগান থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত।

Advertisement

মহিলাদের জন্য মহিলা প্রতিবাদে শামিল হয়ে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মেয়েদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা যেমন চাই, তেমনই তাঁদের কাজের নিরাপত্তাও জরুরি। রাতে কাজ করা থেকে মহিলাদের বিরত থাকার যে পশ্চাদপদ ফতোয়া রাজ্য সরকার দিয়েছে, তা আসলে মনুবাদী চিন্তার প্রতিফলন। তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা।’’ শ্যামবাজারেই লাগাতার অবস্থান চলছে সিপিএমের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের ডাকে। সেই অবস্থানের অষ্টম দিনে সংহতি জানাতে এ দিন সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়েছিলেন চিত্র সমালোচক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, বাচিক শিল্পী ঊর্মিমালা বসু, নাট্য পরিচালক সীমা মুখোপাধ্যায়, নাট্যকার গৌতম চক্রবর্তী, অভিনেতা পঙ্কজ মুন্সী, পরিচালক পৌলমী চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ বস্তি ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক সুখরঞ্জন দে-সহ অনেকেই।

আর জি কর-কাণ্ডে তদন্ত ও বিচারের প্রক্রিয়া যাতে কোনও ভাবেই বেপথে না যায়, সেই দাবি সামনে রেখে এ দিন শোভাবাজার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত বস্তিবাদীদের মিছিল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির ডাকে। এই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও তাঁর চার সঙ্গীকে এ দিন হেফাজতে চায়নি সিবিআই। সেই প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘তদন্ত কি শেষ? আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত দু’দিন আগেই বলেছেন, সরকার যা পদক্ষেপ করবে, তাতে তাঁদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। দিল্লির সরকারের কথাতেই কি সিবিআই চুপ হয়ে যাচ্ছে?’’ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে এখন কোনও আন্দোলনে দল যাবে না বলে কয়েক দিন আগেই (বড়বাজার জেলা কংগ্রেসের সিবিআই দফতর অভিযান ছিল) মন্তব্য করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়। সেই সৌম্যই এ দিন বলেছেন, ‘‘সন্দীপের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এত তাড়াতাড়ি তদন্ত হয়ে গেল? কালীঘাটের কাকুর মতো ঘটনা হচ্ছে না তো? সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে, তা হলে কি দাদা ও দিদির সমঝোতা হয়ে গেল?’’ প্রসঙ্গত, এই প্রশ্ন তুলেই নিজ়াম প্যালেসে বিক্ষোভে গিয়েছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, অমিতাভ চক্রবর্তী, সন্তোষ পাঠকেরা।

বর্ধমানের কাঁকসায় এ দিন আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সভায় ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। সেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ‘উৎসবে ফিরে আসুন’ মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, “দুর্গাপুজো আমাদের সব থেকে বড় উৎসব। সেই উৎসবে আমরা ফিরে আসব। তবে সেখানে নির্যাতিতার বিচারের দাবি থাকবে। আমরা আন্দোলনের উৎসব করব।” পরে প্রশ্নের জবাবে তঁর আরও বক্তব্য, “রাজ্যের মানুষের ক্ষোভ, যন্ত্রণার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট ঠিক বিচার করল না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদী আন্দোলনকে অমানবিক ভাবে আক্রমণ করলেন উৎসবে ফেরার কথা বলে।” পাশাপাশি, বরানগরে সিপিএম নেতা কল্যাণ রায়ের স্মরণে সভায় গিয়ে দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছেন, ‘‘প্রথাগত শিক্ষাটাই সব ক্ষেত্রে মাপকাঠি নয়। খেতমজুর ও শ্রমিক কমিউনিস্ট কর্মীদের ভূমিকা থেকে এটা শেখা যায়। কমিউনিস্ট পার্টিতে সব নেতাই কর্মী, আবার সব কর্মীই নেতা।’’

আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় ভিক্টোরিয়া হাউজ়ের সামনে আজ, বুধবার থেকে ২৪ ঘণ্টার ধর্না-অবস্থানে বসতে চেয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। তবে সেখানে পুলিশ অনুমতি না-দেওয়ায় ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির কাছে তাঁদের অবস্থান হবে বলে জানিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন
Advertisement