Mamata Banerjee

স্বরাষ্ট্র দফতরের জন্য প্রশ্ন নেই বিধানসভায়

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সরকার কি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না? বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শেষে এই প্রশ্নই উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।

Advertisement
রবিশঙ্কর দত্ত
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ০৯:১৩
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

পরিষদীয় নিয়মে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বা পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে সবিস্তার আলোচনার সুযোগ থাকে বিধানসভার অধিবেশনে। বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সরকারপক্ষকে। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বেও অধরা থেকে গেল এ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) তো নয়ই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও প্রশ্ন ছিল মাত্র একটিই। উল্লেখ্য, সেই প্রশ্নটিও ছিল শাসক দলের বিধায়কের।

Advertisement

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সরকার কি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না? বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শেষে এই প্রশ্নই উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শেষে বিধানসভার সচিবালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সরকারের জবাবের জন্য এ বার ৯৭১টি প্রশ্ন জমা নেওয়া হয়। তার মধ্যে ৯৫৯টির মৌখিক ও ১২টি প্রশ্নের লিখিত জবাব দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন ছিল না। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে এই বিষয়ে কোনও জবাবও ছিল না। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দেখতে হবে, সদস্যেরা এই রকম কোনও প্রশ্ন জমা করেছিলেন কি না।” সেই সঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, “প্রশ্ন বাছাইয়ের একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। যে ভাবে জমা পড়ে। সেই ভাবে এক-এক করে তা আসে। হয়তো সে দিক থেকে স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রশ্ন পরে এসেছিল।”

বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব চলেছে ১০ দিন। বিধানসভার সচিবালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই আট দিনে অধিবেশনে আলোচনা, বিতর্ক, প্রশ্নোত্তর হয়েছে ৪৬ ঘণ্টা ৭ মিনিট। এই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য যে একটি প্রশ্ন ছিল, তা স্বাস্থ্য দফতর সম্পর্কিত। স্বাস্থ্য দফতর স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসেরই বিধায়ক সুকান্ত পালের সেই প্রশ্নের জবাবে কাজের বিশদ বিবরণ জানিয়েছে। রাজনৈতিক দিক থেকে সেই বিবরণ সরকারের সাফল্যেরই প্রচার। দ্বিতীয় দফায় রাজ্যপালের ভাষণ-সহ তিন দিন অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে দু’টি দীর্ঘ বক্তৃতা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও আইনশৃঙ্খলার মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর নিয়ে সরকারের বক্তব্য জানার সুযোগ না থাকায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা।

বিধানসভায় বিজেপি পরিষদীয় দলের সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “কার কাছে প্রশ্ন করব? ২০১১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত মাত্র এক বার স্বরাষ্ট্র দফতরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য এবং স্বরাষ্ট্র, এই দু’টি দফতর নিয়ে প্রশ্ন করলে কোনও উত্তর পাওয়া যায় না। তাই প্রশ্ন করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” শুধু প্রশ্নোত্তরই নয়, দফতর ভিত্তিক বাজেট বিতর্কের তালিকা থেকে বহু দিনই বাদ পড়েছে স্বরাষ্ট্র। পরিষদীয় ‘গিলোটিন’ ব্যবস্থায় যে সব গুরুত্বপূর্ণ দফতর নিয়ে আলোচনা সম্ভব হয় না, তার মধ্যে এই দফতরটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য। এ বারের দুই পর্বের অধিবেশনেও যে সাতটি দফতর নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে ছিল পঞ্চায়েত, কৃষি, স্কুলশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা, নগরোন্নয়ন দফতর। বিধানসভার ভিতরে এ নিয়ে আলোচনার কোনও সুযোগ থাকে না বিরোধীদের কাছেও।

পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হাজার কাজের মধ্যেও এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় যত সময় দেন, অন্য কোনও রাজ্য ভাবতেই পারবে না।” বিজেপির উদ্দেশে তাঁর পাল্টা কটাক্ষ, “সংসদে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি ও নীরবতার পরেও এ প্রশ্ন তারা কোন মুখে করেন!”

Advertisement
আরও পড়ুন