মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি তাঁর হাতেই থাকছে। শাসক দলের স্বাস্থ্য-সংগঠন গড়ে সেই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যেই সোমবার আত্মপ্রকাশ করল নতুন সংগঠন, ‘প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’ (পিএইচএ)। নতুন এই সংগঠনের সভানেত্রী হয়েছেন শিল্পমন্ত্রী ও পেশায় চিকিৎসক শশী পাঁজা।
পিএইচএ নামে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সোমবার জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ উপস্থিতি ছিলেন। যা এমন জল্পনাও উস্কে দিয়েছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘বিতর্কিত’ চিকিৎসকদের নতুন পরিচয়ে ফের ফিরিয়ে আনার পথ তৈরি করা হল না তো? যদিও পিএইচএ-র সভানেত্রী শশীর দাবি, ‘‘ব্যক্তি স্বার্থ ও সমস্ত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে দায়বদ্ধতা তৈরি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যেই এই সংগঠন।’’
নতুন সংগঠনের সূত্রেই সামনে এসেছে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় অন্যতম প্রভাবশালী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র কথাও। আর জি কর আন্দোলনের আবহে হুমকি-প্রথা চালানো এবং দুর্নীতির অভিযোগে কোণঠাসা সেই চিকিৎসকদেরই জায়গা দিতেই কি এই সংগঠনের জন্ম হল? অভিযোগ, উপস্থিত চিকিৎসকদের অধিকাংশেরই ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সকলেরই জানা। কয়েক জন আবার ওই বিশেষ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ‘মাথা’ বলে পরিচিত সুশান্ত রায়, বীরূপাক্ষ বিশ্বাসের পরিজনও বটে। বিরোধীরা তো বটেই, শাসক-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের একাংশেরও দাবি, ‘‘বিরুদ্ধ পরিবেশ কিছুটা সামলে নিয়ে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’কে নতুন মোড়কে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ শশী অবশ্য তা অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ কোনও লবি নয়। কোথায় কোনও ফাঁক থাকলে সেটাকে মিটিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রেখে সকলকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করাই একমাত্র লক্ষ্য।’’ আর শাসক দলের এই পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফেল, তা উনি বুঝেই গিয়েছেন। শিল্পমন্ত্রীই যখন চিকিৎসকদের দেখভাল করবেন, তা হলে তাঁকেই স্বাস্থ্যের পূর্ণমন্ত্রীর পদে মুখ্যমন্ত্রী অভিষেক ঘটাবেন নিশ্চয়ই!’’
রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ, জেলা স্তরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়েই নতুন সংগঠন তৈরি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তাতে রয়েছেন শাসক দলের চিকিৎসক-বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায়, রামপুরহাট মেডিক্যালের অধ্যক্ষ করবী বড়াল, তাপস চক্রবর্তী, জয়া মজুমদার, প্রিয়াঙ্কা রানা, সৌতিক রায়-সহ অনেকে। সূত্রের খবর, সংগঠনের সহ-সভাপতি পদে এক বিধায়ক, সম্পাদক পদে কোনও এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ থাকতে পারেন। শশীর দাবি, ‘‘যারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলা সংগঠনের লক্ষ্য।’’
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’ (পিডিএ) তৈরি করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এত দিন সেটিই ছিল শাসক দলের পরিচিত চিকিৎসক সংগঠন। যদিও আর জি করের আন্দোলনে প্রতি মুহূর্তে সরকারকে যখন বেগ পেতে হচ্ছিল, তখন ওই সংগঠনকে প্রতিরোধী ভূমিকায় দেখা যায়নি। বরং, হুমকি-প্রথা এবং বিভিন্ন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠন তৈরির বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন পিডিএ-র সদস্যেরা। শশী বলেছেন, ‘‘পিডিএ-সহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে বিশ্বাসী অন্যান্য সংগঠনও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে।’’
অন্য দিকে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেবাশ্রয়’ প্রকল্প ঘিরে ইতিমধ্যেই সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পর্যাপ্ত কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। শশীর অবশ্য দাবি, ‘‘বিতর্কের কিছু নেই। জনপ্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য বিভিন্ন শিবিরের আয়োজন করেন। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদও তা-ই করেছেন।’’ মন্ত্রী জানান, হাসপাতালে কাজ বন্ধ, ধর্মঘটকে কোনও ভাবে সমর্থন করা হবে না।