— প্রতীকী চিত্র।
পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস তালিকায় তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং তাঁদের আত্মীয়দের নাম থাকার অভিযোগ উঠেছে হুগলিতে। বর্তমানে ওই তালিকার চূড়ান্ত যাচাই পর্বে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ থেকে সেই সব নেতাদের অনেকে নিজেদের ‘অযোগ্য’ দাবি করে তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসনের কাছে। শুধুমাত্র আরামবাগ মহকুমাতেই আবেদনের সংখ্যা ৭৭। এ কথা জেনে বিরোধীদের দাবি, কেন্দ্রীয় আবাস প্রকল্পে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অমূলক ছিল না। তৃণমূল দুর্নীতির অভিযোগ মানেনি।
আরামবাগ মহকুমার গোঘাট ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সৌমেন দিগার ওই তালিকা থেকে তাঁর বাবা শঙ্কর দিগারের নাম কাটার আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘২০১৮ সালে সমীক্ষার সময় আমাদের মাটির বাড়ি থাকায় আবাস তালিকায় বাবার নাম ছিল। এখন চাষাবাদ করে বাড়ি করেছি। তাই নাম কাটানোর আবেদন করেছি।’’ একই কথা জানান গোঘাটের বেঙ্গাই অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মিলন কেওড়া, আরামবাগের মলয়পুর ২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই।
আবার, গোঘাট ২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত শ্যামবাজার পঞ্চায়েতের প্রধান প্রভাত গোস্বামীর বক্তব্য, “আমি মাটির বাড়িতে থাকলেও প্রধানের পদে থেকে আবাস নেব না বলে লিখিত জানিয়েছি।” গোঘাট ১ ব্লকের দলের সভাপতি সঞ্জিৎ পাখিরা জানিয়েছেন, তাঁরা এখনও মাটির বাড়িতে থাকেন। কিন্তু তালিকায় নাম থাকলেও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হিসাবে সরকারি প্রকল্পের বাড়ি নিতে অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্র এই প্রকল্পে টাকা বন্ধ করার পর মুখ্যমন্ত্রী খুব আর্থিক কষ্টেরমধ্যেই গরিব মানুষের বাড়ি দিচ্ছেন। আমার জায়গায় কোনও অসহায় এটা পেলেই ভাল হবে।’’
নেতাদের নাম কাটানোর আবেদন নিয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “যে রকম কঠোর ভাবে সমীক্ষা হচ্ছে, তাতে অযোগ্যরা এমনিতেই বাদ যাবেন। তাই কে কী আবেদন করলেন, তাতে কিছু আসে-যায় না। বরং কঠোর ভাবে সমীক্ষা হওয়ার পর তবে নাম কাটানোর আবেদনের বিষয়টা আমরা ভাল চোখে দেখছি না।”
জেলা প্রশাসনেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে তালিকা যাচাই চলছে, তা প্রকাশ হয় ২০২২-এর শেষে। সেই সময়ে নিজেদের ‘অযোগ্য’ জানিয়ে হুগলিতে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জমা পড়েছিল মাত্র ৫টি। এখন সংখ্যাটা কয়েক গুণ।
বিরোধীদের দাবি, কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় স্বচ্ছতা আনতে একাধিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে এই সব ‘অযোগ্য’ উপভোক্তারা থেকে গিয়েছিলেন। যার জেরে ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষ থেকে ওই প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ করে কেন্দ্র। ২০২২-এর ডিসেম্বরে তালিকা প্রকাশের আগে ‘বিশেষ গ্রামসভা’গুলি যথাযথ ভাবে না হওয়ায় গ্রামবাসীরা আপত্তি তোলার সুযোগ পাননি। ফলে, দুর্নীতি থেকেই গিয়েছিল।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা নাম কাটাচ্ছেন, তাঁদের নাম তালিকায় আসে কী করে, সেটাই তো বড় প্রশ্ন।’’ বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “এটা আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দুর্নীতিতে ডুবে থাকা তৃণমূল নেতাদের সৎ সাজার নাটক। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল দুর্নীতি করেছিল কি না!’’
পক্ষান্তরে, আবাসে কোনও দুর্নীতি বা অনিয়ম ছিল না বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রামেন্দু সিংহরায়। তিনি বলেন, “প্রকল্পটিতে অনেক বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেয়নি। অনেকেই তার মধ্যে নিজের টাকায় বা ধার-দেনা করে পাকা বাড়ি করে ফেলেছেন। তাই তালিকাতে নাম থাকলেও তাঁরা বাড়ি পাবেন না। অনেকে সেটাই জানিয়ে দিচ্ছেন।”