প্রতীকী ছবি।
বজবজ থেকে এগরা, মালদহ থেকে দত্তপুকুর— একের পর এক বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরে। মৃত্যু-মিছিল প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, আর কবে কড়া হবে প্রশাসন? তার পরে কিছু জায়গায় বাজি নিয়ে ধরপাকড় শুরু হওয়ায় অনেকের মনেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, এ বছর উৎসবের মরসুমে কি আর বাজি বাজারের অনুমতি দেবে সরকার? কিন্তু রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর (এমএসএমই) একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, চলতি বছরেও বাজি বাজার বসবে প্রতিটি জেলায়। তবে, অন্যান্য বারের মতো এক সপ্তাহ নয়, বাজার চলবে এক মাস ধরে!
যা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। পরিবেশকর্মীদের বড় অংশেরই দাবি, এমন বাজার বসলে বেআইনি বাজির কারবার মাথাচাড়া দিতে পারে। ঘটতে পারে আরও বিস্ফোরণের ঘটনা। তাঁদের প্রশ্ন, উৎসবের মরসুমে কালীপুজো এবং বড়দিন মিলিয়ে যেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাজি ফাটানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত, সেখানে এত বেশি দিন বাজি বাজার বসতে দেওয়ার উদ্দেশ্য কী? প্রসঙ্গত, শুক্রবারই আরও এক বার বেরিয়াম যুক্ত বাজির উপরে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেন, ‘‘এমএসএমই দফতর অনেক ক্ষেত্রেই ভাল কাজ করে। কিন্তু বাজির ব্যবসা আর বিড়ির ব্যবসায় যে পার্থক্য আছে, সেটা বুঝতে হবে। বিস্ফোরক নিয়ে যেখানে কাজ, সেখানে সতর্ক না হলে কী ঘটতে পারে, তা আমরা দেখেছি। সুপ্রিম কোর্ট যেখানে বাজির ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করে পরিবেশ দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও নিরি-র মতো সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে বলেছে, সেখানে তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এমএসএমই দফতর একাই সব ঠিক করে ফেলছে!’’ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের কেউই এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। তবে, নতুন এই নির্দেশিকা নিয়ে বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশের মধ্যেও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাজি বাজারের ৩০ দিনের জন্য ১০০ কেজি পর্যন্ত সবুজ বাজি ও ৫০০ কেজি পর্যন্ত ফুলঝুরি বিক্রির অনুমতি দিতে পারবেন জেলাশাসক। ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, অন্যান্য বার কলকাতায় যে বৈধ বাজি বাজার বসে, সেখানে এক-একটি স্টলে ১৫ কেজি পর্যন্ত বাজি রেখে বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়। তা হলে কি এ বার আরও বেশি বাজি মজুত রাখা যাবে? এত বিপুল বাজি নিয়ে বাজার চালাতে গেলে বিপদ ঘটবে না তো? সেই প্রশ্নও উঠেছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাজারে ৫০টির বেশি স্টল করা যাবে না। প্রতিটি স্টলের মধ্যে তিন মিটারের দূরত্ব রাখতে হবে। কোনও স্টলের গেট মুখোমুখি হওয়া চলবে না। বাজার চত্বরে স্থানীয় ভাষায় ‘বিস্ফোরক এবং বিপজ্জনক সামগ্রী’ লেখা বোর্ড ঝুলিয়ে রাখতে হবে। স্কুল, মন্দির, টেলিফোন বা বিদ্যুৎ ভবনের মতো জায়গা থেকে বাজি বাজারের দূরত্ব অন্তত ৫০ মিটার হতে হবে। বাজি রাখার জন্য দাহ্য নয়, এমন বস্তু দিয়ে ছাউনি তৈরি করতে হবে। বিদ্যুৎ এবং আলোর ব্যবহার নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। স্টলের ৫০ মিটারের মধ্যে বাজি ফাটানো যাবে না। জরুরি চিকিৎসার বন্দোবস্তের পাশাপাশি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা এবং দমকলের দু’টি গাড়ি অবশ্যই রাখতে হবে।
‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বললেন, ‘‘বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৩০ দিন সময় আছে। অর্থাৎ, দুর্গাপুজো থেকেই চাইলে বাজার বসে যেতে পারে। কিন্তু একের পর এক বিস্ফোরণের জেরে তৈরি হওয়া জটিলতায় যেখানে বৈধ সবুজ বাজিই প্রস্তুত করা যাচ্ছে না, সেখানে এত দিন স্টল চলবে কী ভাবে?’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, বাজার বসাতে গেলে দমকল, পুলিশের অনুমতি লাগে। মাঠ নিতে পুরসভাকে মোটা টাকা ভাড়া দিতে হয়। সাত দিনের বাজার বেড়ে ৩০ দিন হলে খরচ বিপুল বাড়বে। তা সামলানো হবে কী ভাবে? ‘আতশবাজি উন্নয়ন সমিতি’র চেয়ারম্যান বাবলা রায়ের যদিও দাবি, ‘‘বাজির জোগানে অভাব নেই। সরকার পক্ষে রয়েছে, চাইলে দুর্গাপুজোর আগে থেকেই বাজি বাজার চলতে পারে।’’