যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
প্রথমে বাছাই তালিকায় রাখলেও শেষ পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ‘ইনস্টিটিউট অব এমিনেন্স’-এর তকমা দিতে রাজি হয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু ওই তকমা পেতে নিয়মমাফিক আবেদনের জন্য যাদবপুরের তরফে জমা দেওয়া এক কোটি টাকা কার্যত খেসারত দিতে হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যসভায় যাদবপুরের এই স্বীকৃতি হারানো নিয়ে প্রশ্নোত্তরের আবহে কেন্দ্রের কাছে সেই টাকা ফেরত চাওয়ার কথা ভাবছেন যাদবপুর কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তথা জুটা-র তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে ইমেল করে ওই ‘টাকা উদ্ধারে’ তৎপর হওয়ার অনুরোধ করা হয়। সেই দাবি অত্যন্ত সঙ্গত বলে রবিবার ভাস্কর সায় দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, যাদবপুরের মতো একই কারণে বছর দুই আগে বিশিষ্ট-তকমা থেকে বঞ্চিত হয় চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ও। কিন্তু আবেদনের টাকা তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেও যাদবপুরের শিক্ষক মহলের প্রশ্ন, নানা পরিকাঠামোগত সমস্যায় কাবু যাদবপুরের জন্য এক কোটি টাকা কম নয়। ওই টাকার ৭৫ শতাংশ কেন যাদবপুর ফেরত পাবে না?
অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত আজ, সোমবার কিছু দিন অসুস্থতার পরে যাদবপুরে তাঁর দফতরে ফিরবেন। গত ১ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতে গোলমালের পরে তিনি ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন। ভাস্কর এ দিন বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে আমরা টাকা ফেরতের আবেদন করব।’’ এ রাজ্যের শিক্ষাবিদদের বড় অংশই মনে করেন, কার্যত অন্যায় ভাবে যাদবপুরকে বিশিষ্ট তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এর দায় রাজ্য সরকারের উপরেই চাপিয়েছেন। তবে সেই অভিযোগও পুরোপুরি ঠিক নয় বলে শিক্ষাবিদদের অভিমত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বিশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য যাদবপুর কর্তৃপক্ষ পাঁচ বছরে ১০১৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন। এর পরে কেন্দ্র বলে, এর ২৫ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দিতে হবে। যা দিতে অপারগতার কথা জানায় রাজ্য। এর পরে যাদবপুর কর্তৃপক্ষ তাদের বাজেটে রদবদল করে ৬০৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনেন। এবং তাঁরা কেন্দ্রকে আশ্বাস দেন, নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক নিজেরাই রাজস্ব উৎপাদন করে ওই টাকার ২৫ শতাংশ পাঁচ বছরে উপার্জন করতে পারবেন। অর্থাৎ কেন্দ্রকে শুধু ৬০৫ কোটি টাকা দিলেই চলবে। কিন্তু কেন্দ্র তাতেও রাজি হয়নি। ৮টি কেন্দ্রীয় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চারটি অসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশিষ্ট তকমা পায়। এমনকি তৈরিই না হওয়া জিও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তকমা পেলেও যাদবপুর ব্রাত্যই থাকে।
অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘রাজ্যকে যে ওই প্রকল্পে টাকা দিতে হবে, তা তো বলাই হয়নি। আগে খেলা শুরু হল, তার পরে খেলার নিয়ম পাল্টানো হল, এটা কি সঙ্গত? বিশিষ্ট তকমা থেকে যাদবপুরকে বঞ্চিত করার দায় রাজ্যের উপরে চাপানো ঠিক নয়।’’
অন্য দিকে, নতুন সপ্তাহের সূচনায় যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পুলিশি হেনস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ছাত্রছাত্রীদের তরফে বক্তব্য, অনেক আগে পাশ করেছেন বা ভিন্ রাজ্যে চাকরি করছেন, এমন কেউও ডাক পাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মহলের শঙ্কা, ছাত্রদের একটি গোষ্ঠীও পুলিশকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। জনৈক ছাত্রনেতা বলেন, ‘‘র্যাগিং বা মাদক সেবনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছাত্রদের একাংশকেও যেন তেন ভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।’’ পুরনো একটি পোস্টারের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কয়েক জনকে পুলিশ হঠাৎ এখনই ডাকাতেও অনেকে বিস্মিত। পুলিশ অবশ্য বলছে, তদন্ত নিয়ম মতো ঠিক পথেই চলছে। কাল, মঙ্গলবার পুলিশি তলব পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা দল বেঁধে যাদবপুর থানায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।