বোলপুর তৃণমূল কার্যালয়ে কালী পুজোয় প্রণাম করছেন অনুব্রত মণ্ডল।বৃহস্পতিবার। ছবিঃ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
তিনি ফিরলেন। ফিরল পুজোর জাঁক। অনুব্রত মণ্ডলের হাজিরায় বোলপুরে, তৃণমূলের কার্যালয়ে কালীর অলঙ্কারও বাড়ল। তবে, সেই অলঙ্কার খাঁটি সোনার কি না, ধোঁয়াশা থেকেই গেল।
কাকার মৃত্যুর জন্য অশৌচ চলায় কালীপুজোয় উপোস করবেন না বা বিধিতে অংশ নেবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত। এ দিন বিকেলের পরে দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছন তিনি। কিছু দূর থেকে কালীকে প্রণাম করেন। বীরভূমের ‘কেষ্টদা’র সঙ্গে ছিলেন কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল।
সব ছাপিয়ে এই পুজোর আকর্ষণ বরাবর থেকেছে কালী প্রতিমার স্বর্ণালঙ্কার। ২০২১ সালে প্রায় ৫৭০ ভরি সোনার গয়নায় কালী প্রতিমাকে সাজিয়েছিলেন অনুব্রত। গত দু’বছর তিনি গরু পাচার মামলায় জেলবন্দি থাকায় এই পুজোর জৌলুস কমেছিল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের নজরে থাকা কালীর গয়নার পরিমাণও হয়েছিল নামমাত্র। এ বার অবশ্য সভাপতির উপস্থিতিতে জৌলুস কিছুটা ফিরেছে।
কর্মীদের উৎসাহে বৃহস্পতিবার গমগম করেছে দলীয় কার্যালয়। কালীর গায়ে গয়নার পরিমাণও বেড়েছে। ছিল দেবীর মাথার মুকুট, বাজুবন্ধ, হাতের বাউটি, কানের দুল, নাকের নথ, গলার হার, আংটি, টিকলি। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের যদিও দাবি, অনেক গয়নাই ‘নকল’ বা ইমিটেশন। ৫৭০ ভরি থেকে ‘ইমিটেশন’ কেন, তা অনুব্রত নিজে বা অন্য কোনও জেলা নেতা খোলসা করেননি। অনুব্রত বলেছেন, “দু'বছর ধরে পুজোয় যা হয়ে এসেছে, এ বারও তাই হচ্ছে। গত দু'বছর ধরে যাঁরা মাকে গয়না পরিয়েছেন, তাঁরা এ বারও মাকে সাজিয়েছেন। কাকা মারা যাওয়ার যে হেতু এক বছর হয়নি, তাই আমার অশৌচ চলছে। আমি ভিতরে ঢুকিনি, বাইরে থেকেই মাকে প্রণাম করেছি।”
বিরোধীদের কটাক্ষ, ইডি-সিবিআইয়ের ‘ভয়েই’ গয়না নিয়ে এ বারের পুজোয় ‘বাড়াবাড়ি’ করা হয়নি। বিজেপির বোলপুর সংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, “পুরোটাই লোক দেখানো ছাড়া কিছু নয়। মানুষ সবই বুঝতে পারছে, এখন দেবীকে ইমিটেশনের গয়না পরানোর কারণ কী হতে পারে। তদন্তকারীদের হাত থেকে বাঁচতেই হয়তো নকল সোনার গয়না পরানো হয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “অনুব্রতের কালী নকল সোনা পরলেন, না আসল সোনা, তার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তবে, এর সম্পর্ক ইডি-সিবিআইয়ের সঙ্গে থাকতেই পারে!”
অনুব্রতের কথায়, “মাকে প্রার্থনায় জানিয়েছি, সকলকে ভাল রেখো, সবাই যেন সুস্থ থাকে। জেলায় যাতে কোনও হানাহানি না-হয়।”