অমর্ত্য সেনের নামে জমির মিউটেশন! নিজস্ব চিত্র।
শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের ‘প্রতীচী’ বাড়ির জমির মিউটেশন নিয়ে যে টানাপড়েন চলছিল, অবশেষে তার ‘নিষ্পত্তি’ হল। উচ্ছেদ নোটিস নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বাবা আশুতোষ সেনের নামে থাকা জমি অমর্ত্যের নামে করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিএলআরও)-এর দফতর সূত্রে।
গত কয়েক মাস ধরেই অমর্ত্য ও বিশ্বভারতীর মধ্যে ওই ১৩ শতক জমি নিয়ে টানাপড়েন চলছে। ‘প্রতীচী’র জমি মিউটেশনের জন্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে দু’পক্ষ হাজির হলেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। ঠিক তার পরেই নোবেলজয়ীকে উচ্ছেদের নোটিস পাঠানো হয়। মিউটেশনের নিষ্পত্তির আগেই কেন উচ্ছেদের নোটিস, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই সবের মধ্যেই সোমবার বিএলআরও দফতরের একটি সরকারি নথি প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বোলপুর ব্লকের সুরুল মৌজার ১৯০০/২৪৮৭ দাগ এবং খতিয়ান নম্বর ২৭০-এর জমিটির মিউটেশন অমর্ত্যের নামে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, জমির পরিমাণও ১.৩৮ একর বলা ওই নথিতে। যদিও এই নথির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। বিএলআরও দফতর সূত্রে খবর, বাবা আশুতোষের নামে থাকা জমিটি তাঁর ছেলে অমর্ত্যের নামে করে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, ১৯৪৩ সালে অমর্ত্যের বাবা আশুতোষকে কখনই ১.৩৮ একর জমি লিজ় দেওয়া হয়নি। ১.২৫ একর জমি লিজ় দেওয়া হয়েছিল। তার ভিত্তিতে বিশ্বভারতী অমর্ত্যের বিরুদ্ধে ১৩ ডেসিমেল জমি দখলের অভিযোগ করেছে। সেই জমি ফেরতের দাবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আরও বক্তব্য, ’৪৩ সালে বিশ্বভারতী এবং আশুতোষের মধ্যে স্বাক্ষরিত লিজ়ের নিবন্ধিত দলিল ও ২০০৬ সালে কর্মসমিতিতে পাশ হওয়া প্রস্তাব থেকে স্পষ্ট, আশুতোষ বা অমর্ত্যকে ১.৩৮ একর জমি তো দূরের কথা, বিশ্বভারতীর কোনও জমিরই মালিকানা দেওয়া হয়নি। শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’ নামের প্রাঙ্গণে অমর্ত্যের বাসভবনটিও বিশ্বভারতীর মালিকানাধীন জমিতে তৈরি। এরই মাঝে বিশ্বভারতীর তরফে তিন পাতার নোটিস পাঠানো হয় নোবেলজয়ীকে। বলা হয়, ২৪ মার্চ বা তার আগে শো-কজ় নোটিস পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হবে, কেন অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে উচ্ছেদ আইন প্রয়োগ করা হবে না! কারণ তিনি ‘অন্যায় ভাবে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ডেসিমেল (শতক) জায়গা ‘দখল’ করে আছেন। চিঠিতে ২৯ মার্চ বিকেলে অমর্ত্যকে সশরীর অথবা তাঁর কোনও প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম কর্মসচিব তথা এস্টেট অফিসারের (যাঁর সই রয়েছে নোটিসে) সামনে হাজির হতেও বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের একাংশের মতে, জমি অর্থনীতিবিদের নামে মিউটেশন হয়ে যাওয়ায় বিশ্বভারতীর দেওয়া উচ্ছেদের নোটিস ‘অর্থহীন’ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে বিশ্বভারতীর বক্তব্য এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘দু’টি শুনানি হয় বোলপুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে। নাম পরিবর্তনের বিষয়টি হয়ে গিয়েছি।’’