ভাঙচুরের পরে পুরুষ ওয়ার্ড। শনিবার রাতে সিউড়ি সদর হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডের পরে হাসপাতালে নিরাপত্তা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেও ফের রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটল সিউড়ি সদর হাসপাতালে। শনিবার রাতের এই ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে। অভিযোগ, হাসপাতালের মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডের কম্পিউটার, ফোন এবং একটি টেবিল ভেঙে ফেলে রোগীর পরিজনেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও রবিবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। চলতি বছরে এ নিয়ে চার বার এমন ঘটায় চিন্তিত জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কেন বার বার এমন ঘটছে, তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করতে চলেছে দফতর।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, গত বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজার থানা এলাকার আঙ্গারগড়িয়ার বাসিন্দা আদু বাগদি (৭২) পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির পরে তাঁর ইউএসজি করা হয়। সেই রিপোর্টে বেশ কিছু সমস্যার উল্লেখ থাকায় গোটা বিষয়টি জানানো হয় আদুর আত্মীয়দের। তারা সবটা জেনে নথিতে সইও করেন। শুক্রবার আদুর বুকে ব্যথা শুরু হয়। তাঁর ইসিজি করানো হয়। সেই রিপোর্টেও নানা সমস্যার কথা উঠে আসে। রোগীর পেটের সমস্যা থাকায় বুকে ব্যথার প্রয়োজনীয় সমস্ত ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়েও আদুর পরিজনদের জানানো হয়। এমনকি, আদুকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করার কথাও বলা হয়। কিন্তু আদুর পরিজনেরা তাঁকে সিউড়ি সদর হাসপাতালেই রাখার কথা বলেন বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে আদু হাসপাতালের শৌচাগারে যান। তখন আদুর সঙ্গে তাঁর কোনও পরিজনও ছিল না। শৌচাগারে গিয়ে পড়ে যান তিনি। সেখান থেকে আদুকে ধরে বিছানায় নিয়ে আসা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান। সে সময়ে ওয়ার্ডে থাকা নার্সদের অভিযোগ, মৃত্যুর ঘটনা জানার পরে উপস্থিত আত্মীয়েরা বিশেষ কিছু না বললেও, কিছু ক্ষণ পরে হঠাৎই জনা তিরিশেক লোক জড়ো হয় ওয়ার্ডে। বেশ কিছুক্ষণ মৃত্যুর কারণ নিয়ে তর্কাতর্কি করে তারা। এর পরে হঠাৎই ওয়ার্ডে ভাঙচুর শুরু করে তারা।
যদিও আদুর জামাই জগদীশ বাগদি বলেন, ‘‘পেটের সমস্যা নিয়ে ওঁকে ভর্তি করেছিলাম। ভর্তির সময়ে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। বেশ কিছুক্ষণ পরে চিকিৎসক আসেন। বার বার চিকিৎসক ও নার্সদের ডাকতে হচ্ছিল, তবেই আসছিল। কেন মৃত্যু হয়েছে, সেটা বলতে পারব না। তবে মৃত্যুর পরে একটু কথা কাটাকাটি, ঠেলাঠেলি হয়েছিল। এর বেশি কিছু হয়নি।’’
ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) সিউড়ি শাখার সম্পাদক দেবাশিস দেবাংশী বলেন, ‘‘নানা কারণে রোগী মৃত্যু হতে পারে। যদি চিকিৎসকদের গাফিলতি থাকে, তা হলে অভিযোগ জানানোর নির্দিষ্ট জায়গা আছে। শাস্তিরও নির্দিষ্ট বিধান আছে। ভাঙচুর করে কোনও সমস্যা সমাধান হতে পারে না।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, দ্রুত বিষয়টি হাসপাতালের পুলিশ আউটপোস্ট এবং সিউড়ি থানায় জানানো হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় দু’জনকে আটকও করে পুলিশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জন মণ্ডল। যদিও রবিবার বিকাল পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। কেন এখনও গ্রেফতার হল না? পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কারা সরাসরি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তার খোঁজ চলছে।’’
সূত্রের খবর, চলতি বছরের এ নিয়ে তিন বার ভাঙচুর হল সিউড়ি সদরে। ১৪ জুলাই রোগী মৃত্যুর অভিযোগে ভাঙচুর, ১১ এপ্রিল ময়নাতদন্তে দেরি হওয়ার অভিযোগে ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরে ভাঙচুর এবং গত ১৭ মার্চ রোগী মৃত্যুর অভিযোগেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে হাসপাতালে। বার বার কেন এমন ঘটছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি। তিনি বলেন, “বার বার কেন এমন ঘটছে, সেটা তো খতিয়ে দেখতেই হবে। হাসপাতালে সিভিক ভলান্টিয়ারদের পরিবর্তে পুলিশকর্মী দেওয়া হয়েছে। কারণ খোঁজটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ নিয়ে আলোচনায় বসব।”