সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
বীরভূমে বালি পাচারের অভিযোগ নতুন নয়। কয়েক দিন আগেই সেই অভিযোগ ঘিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যের তোপের মুখে পড়তে হয় জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের। বুধবার জয়দেব মেলায় এসে অবৈধ বালি তোলা নিয়ে সরব হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তৃণমূল নেতাদের ‘মারধরের’ নিদান দিয়ে বিতর্কেও পড়লেন।
এ দিন দুপুরে জয়দেবের রাধাবিনোদ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরে একটি আশ্রমে প্রসাদ খান সুকান্ত। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অভিযোগ করেন, বীরভূমে দেদার বালি লুট চলছে। প্রতিনিয়ত বালি লুট হওয়ার ফলে আগামী দিনে নদীগুলির গতিপথ পরিবর্তন, ভাঙন সমস্যা, জল সমস্যা তৈরি হবে। এর পরেই তাঁর নিদান, ‘‘বীরভূমের মানুষের উচিত লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে এইসম্পদকে রক্ষা করা। তৃণমূলের নেতাদের মেরে তাঁদের ব্যবস্থা করা। এরাই চুরি করে লুট করে নদীর সমস্ত কিছু শেষ করে দিচ্ছে, এতেআগামী দিনে বীরভূমের মানুষ জল পাবে না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরে জেলা জুড়ে অবৈধ বালি কারবার ও পাচার বন্ধে যৌথ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ও প্রশাসন। ধরা পড়ছে একাধিক অবৈধ বালি বোঝাই গাড়ি। কিন্তু, এর পরেও অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। বোলপুর, নানুর, ইলামাবাজার, পাড়ুই থানার অনেক এলাকায় একাধিক অবৈধ বালির ঘাট রয়েছে। সেখান থেকে রাতের অন্ধকারে কোথাও মেশিন লাগিয়ে, অথবা দিনেদুপুরেও ট্রাক্টর ও ডাম্পার নামিয়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেদার বালি লুট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
সেই প্রসঙ্গে এ দিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, “বালি তোলা ঘিরে লাভের বখরা ভাগ করে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক জনকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন নানুর দেখার জন্য, এক জনকে দায়িত্ব দিয়েছেন ইলামবাজার দেখার জন্য। ওঁদের নাম বলছি না। ওই নেতাদের নাম মুখে নিতেও আমার লজ্জা লাগে! এই চোরেরা জনগণের সম্পদ লুট করছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী চুপচাপ বসে দেখছেন।” পাল্টা তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মুখোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো বালি নিয়ে লাগাতার অভিযান চলছে।প্রশাসনের দিক থেকে সম্পূর্ণ রূপে চেষ্টা করা হচ্ছে অবৈধ বালি পাচার বন্ধ করার। সুকান্তবাবু বাজার গরম করার জন্য এই সব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’’
জয়দেব মেলাতে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য টাকা নেওয়া নিয়েও এ দিন ক্ষোভ জানান সুকান্ত। বলেন, “মেলায় গাড়ি পিছু ২৫০০-৩০০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে, বাসের জন্য ৬০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এটা পুরো তৃণমূল ট্যাক্স। এ ভাবে চলতে পারে না। কুম্ভ মেলায় কোনও কিছুই নেই এই সব। অথচ এত বড় মেলা হচ্ছে। ৭০০ কোটি টাকা উত্তরপ্রদেশ সরকার খরচ করছে নিজের পকেট থেকে। সেখানে কেউ তো এই রকম ট্যাক্স তোলে না।এখানে তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা ট্যাক্স তুলছে।’’
মলয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘জয়দেব মেলা উপলক্ষে ট্যাক্স আদায়ের যে অভিযোগ তুলছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ও মেলা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে যেটুকু কর নেওয়ার, সেটুকু সরকারি ভাবেই নেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।”