Khayrasole Blast

বিস্ফোরণে জখমেরা কি ক্ষতিপূরণ পাবেন

সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ খয়রাশোলের লোকপুর থানা এলাকার পিডিসিএল পরিচালিত গঙ্গারামপুরচক খনিতে বিস্ফোরক ভর্তি ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:০৮
বাস্তবপুর গ্রামে খনিতে বিস্ফোরণে মৃতদের পরিজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে।

বাস্তবপুর গ্রামে খনিতে বিস্ফোরণে মৃতদের পরিজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। নিজস্ব চিত্র।

খয়রাশোলের খোলামুখ খনিতে বিস্ফোরণে মৃতদের পরিবার মঙ্গলবার ক্ষতিপূরণের চেক পেয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার ঘোষিত অর্থের চেক বিলি, সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি প্রশাসনের আধিকারিকেরা আশ্বাস দিয়ে এসেছেন, মৃতদের নিকট আত্মীয়কে চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু, খনিতে বিস্ফোরণে যে তিন জন জখম হয়ে সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁদের পরিবারও জানতে চায়, তারা ক্ষতিপূরণ পাবে কি না। জেলাশাসক অবশ্য এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।

Advertisement

সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ খয়রাশোলের লোকপুর থানা এলাকার পিডিসিএল পরিচালিত গঙ্গারামপুরচক খনিতে বিস্ফোরক ভর্তি ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটে। তার জেরেই প্রাণ হারান ট্রাক চালক-সহ ৮ জন। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সকলের দেহ। মৃতদের মধ্যে ৪ জন খনি লাগোয়া বাস্তবপুরের বাসিন্দা ছিলেন। ওই ঘটনায় আহত তিন জনের বাড়িও বাস্তবপুরে।

বুধবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা হল, ঘটনায় জখম লক্ষ্মীশ্বর হেমব্রমের স্ত্রী মণি হেমব্রমের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘‘খুব খারাপ অবস্থা ছিল আমার স্বামীর। এখন কিছুটা ভাল। তবে একটা চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়ি ফিরে আগের মতো কাজ করতে পারবে কি না, জানি না। সরকার না-দেখলে চার বছরের মেয়েকে নিয়ে কী করে চলবে আমাদের?’’ প্রায় একই বক্তব্য আহত গণেশ মারান্ডির শ্বশুর রবিলাল সরেনর। জানালেন, জামাইয়ের বুকে ও হাতে লেগেছে। মেয়ে (জানকী) সিউড়ি হাসপাতালে গিয়েছেন। সরকারি সাহায্য পেলে তাঁদের ভাল হয়।

সিউড়িতে একটি দুর্গাপুজো উদ্বোধনে এসে মঙ্গলবার একই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্য ঘোষিত হলেও আহতদের জন্য রাজ্য সরকার কোনও আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেনি। ওঁদের জন্যও কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করুক রাজ্য সরকার।’’ বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘আহতদের জন্যও আর্থিক সহায়তা থাকবে। আগে ওঁরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুন।’’

বিস্ফোরণের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী সুনীল কিস্কুর সঙ্গে দেখা হল গ্রামে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আরও তিন জন ছিলাম। একটি অন্য গাড়ি থেকে কোদাল বেলচা নামাচ্ছিলান। বিস্ফোরণের আওয়াজে কিছুক্ষণ জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফিরতেই দেখি, ভয়ঙ্কর দৃশ্য! আমাদের গাড়ি কিছুটা তফাতে ছিল বলে প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।’’ দু্র্ঘটনায় মৃত জয়দেব মুর্মুর স্ত্রী মণি, মঙ্গলের স্ত্রী বুড়ি মারান্ডি এবং সোমলাল হেমব্রমের স্ত্রী বুধুনি জানান, তাঁরা সরকার ঘোষিত পুরো অঙ্কের চেক হাতে পেয়েছেন। সেই সময় স্থানীয় সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সিএইচও এবং দুই আশাকর্মী এলেন মৃতদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে, রক্তচাপ মাপলেন। শোকের আবহে কী ভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন, মৃতের নিকট আত্মীয়দের সেই পরামর্শ দিয়ে গেলেন তাঁরা।

যে বিস্ফোরণের জেরে এতগুলি মানুষের প্রাণ গেল, তার কারণ এবং কোথায় ফাঁক ছিল খতিয়ে দেখতে একাধিক বিশেষজ্ঞদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেই তালিকায় ছিল এফএসএল (ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি), বিডিডিএস বা বম্ব ডিটেকশন অ্যান্ড ডিসপোজাল ইউনিট, ডিজিএমএস এবং পেসো-র(জিএসও) বিশেষজ্ঞরা।

মঙ্গলবার সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘বীরভূমে এত বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। তার পরে এমন ঘটনা ঘটল, তদন্ত ভাল করে হওয়া উচিত। পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করে থাকলে এনআইএ তদন্তভার নিতে পারে।’’ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণ এবং ৮ জনের মৃত্যুতে একটি মামলা রুজু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘খনিতে কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটল, কোথায় ফাঁক ফোকর রয়েছে, তার তদন্ত হবেই।’’

Advertisement
আরও পড়ুন