পানায় ঢাকা বিষ্ণুপুরের যমুনাবাঁধ। নিজস্ব চিত্র
বিষ্ণুপুরের ঐতিহাসিক সাতটি বাঁধ (জলাশয়) স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকে অভিযোগ জানালেন বিজেপির বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। একই সঙ্গে মন্ত্রকের কাছে তিনি বাঁধগুলি সৌন্দর্যায়নে আর্জি জানান।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাটিলের কাছে লিখিত ভাবে ওই অভিযোগ জানান সৌমিত্র। তিনি বলেন, “কেবলমাত্র স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যই বাঁধগুলির অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকে জানিয়েছি। মন্ত্রী আমাকে জেলা প্রশাসনের তরফে কেন্দ্রের কাছে বাঁধগুলি বাঁচাতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা-সহ সামগ্রিক রিপোর্ট পাঠাতে বলেছেন। আমি প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব। তবে প্রশাসন আদৌ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করবে কি না সন্দেহ রয়েছে।’’ মহকুমা শাসক (বিষ্ণুপুর) প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “ঊর্ধ্বত কর্তৃপক্ষের তরফে বাঁধ সংস্কারের জন্য কোনও প্রস্তাব পেলে অবশ্যই পদক্ষেপ করব। বিষ্ণুপুরের বাঁধগুলির পরিস্থিতি আমাদের নজরে রয়েছে।”
বিষ্ণুপুরের লালবাঁধ, শ্যামবাঁধ, কৃষ্ণবাঁধ, যমুনাবাঁধ, পোকাবাঁধ, কালিন্দিবাঁধ ও গাঁটাতবাঁধের সঙ্গে মল্লরাজাদের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ইতিহাস গবেষকেরা জানান, শহরের জলকষ্ট দূর করতে এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ রুখতে বাঁধগুলি বড় ভূমিকা ছিল। সময়ের সঙ্গে সাতটি বাঁধই সৌন্দর্য হারায়। বাসিন্দাদের দাবি, বাঁধের একাংশ ভরাট করে প্লট তৈরি করে জমি মাফিয়ারা বিক্রি করছেন। কোথাও আবর্জনা, কচুরিপানা বাঁধ দখল করে নিয়েছে।
বাঁধগুলির করুণ দশা নিয়ে বাসিন্দাদের আক্ষেপ কম নয়। কৃষ্ণবাঁধ লাগোয়া বিষ্ণুপুর শহরের কাটানধার, বাসন্তীতলা, তেঁতুলতলার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, মৎস্য দফতরের পরিকল্পনাহীন কাজের জন্য কৃষ্ণবাঁধের আসল চরিত্রই পাল্টে গিয়েছে। এনিয়ে মাস ছয়েক আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জোট বেঁধে বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসকের দফতরে অভিযোগও জানান। দলমাদল রোডের বাসিন্দা সংস্কৃতি-কর্মী আশিস রায়ের আক্ষেপ, “বছর পাঁচেক আগেও অবসর সময়ে শ্যামবাঁধে মাছ ধরতে যেতাম। এখন সেই বাঁধটাকেই ছোট পুকুর মনে হয়।”
তবে বছর খানেক আগে প্রশাসন ও বিষ্ণুপুর পুরসভা লালবাঁধকে সংস্কার করে সাজিয়ে তুলেছে। ওই বাঁধ এখন পর্যটক ও শহরবাসীর কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান গৌতম গোস্বামী জানান, শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল যমুনাবাঁধের সংস্কার। সে কাজেও ছাড়পত্র পেয়েছে পুরসভা। অম্রুত প্রকল্পে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের দেওয়া ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে যমুনাবাঁধে পানা সরিয়ে পদ্মফুল চাষের পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভা।
গৌতমের দাবি, ‘‘বিজেপি সাংসদ রাজনৈতিক স্বার্থে বাঁধগুলি নিয়ে প্রশাসনিক অবহেলার অভিযোগ তুলছেন। ঐতিহাসিক বাঁধগুলির মধ্যে কৃষ্ণবাঁধ ছাড়া বাকিগুলি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। সেক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিক অনুমতি না দিলে বাঁধ সংস্কারের কাজে হাত দিতে পারে না প্রশাসন। কৃষ্ণ বাঁধ মৎস্য দফতরের অধীনে রয়েছে। অন্য বাঁধগুলি সংস্কারের কাজ আমরাই করতে চাই। তার জন্য মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছি আমরা।”