Old Houses

পথের ধারে বুড়ো বাড়ি, ঘুম উড়েছে পুরবাসীর

শতাব্দী প্রাচীন রঘুনাথপুর শহরে কয়েকটি বাড়ির বয়স একশো বছরেরও বেশি। নিয়মিত সংস্কারের অভাবে সে সব বাড়ি জীর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই বাড়িগুলির আশপাশের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, পুরুলিয়া শহরে মাঝে মধ্যেই পুরনো বাড়ি ভাঙছে।

Advertisement
শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫৪
জীর্ণ বাড়ি, রঘুনাথপুরে ঝান্ডাপাড়ায়। ছবি: সঙ্গীত নাগ

জীর্ণ বাড়ি, রঘুনাথপুরে ঝান্ডাপাড়ায়। ছবি: সঙ্গীত নাগ

পুরুলিয়া শহরে ঝুল বারান্দা ভেঙে হতাহতের পরে জীর্ণ বাড়ি নিয়ে সর্বত্রই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদিও পাশের শহর রঘুনাথপুর শহরের বাসিন্দাদের একাংশের ক্ষোভ, পুরএলাকায় বেশ কিছু পুরনো বাড়ি থাকলেও পুরসভার সেসব নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই। হয়নি সমীক্ষাও। ফলে যে সব বাসিন্দার ঘাড়ের কাছে পুরনো বাড়ি রয়েছে, তাঁদের কার্যত ঘুম ছুটেছে।

Advertisement

শতাব্দী প্রাচীন রঘুনাথপুর শহরে কয়েকটি বাড়ির বয়স একশো বছরেরও বেশি। নিয়মিত সংস্কারের অভাবে সে সব বাড়ি জীর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই বাড়িগুলির আশপাশের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, পুরুলিয়া শহরে মাঝে মধ্যেই পুরনো বাড়ি ভাঙছে। তাঁরাও আতঙ্কিত। পুরসভার ওই বাড়িগুলি নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। না হলে এখানেও দুর্ঘটনা ঘটবে।

রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান তরণী বাউরির অবশ্য দাবি, ‘‘শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি জীর্ণ বাড়ির মালিককে চিঠি দিয়ে সেটি ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে।’’ বাসিন্দাদের পাল্টা বক্তব্য, পুরসভা একটি বাড়ির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আরও কয়েকটি বাড়ির অবস্থাও ভাল নয়। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঝান্ডাপাড়ার একটি বাড়ি জীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দোতলা বাড়িটি একেবারে রাস্তার পাশেই।

স্থানীয় বাসিন্দা অজিত চন্দ্র বলেন, ‘‘বাড়িটি দিনের ব্যস্ত সময়ে রাস্তার উপরে ভেঙে পড়লে কী ঘটতে পারে, কল্পনা করলেই ভয় লাগছে।জনস্বার্থে পুরসভার কার্যকরী পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।” ঝান্ডাপাড়ার ওই বাড়ির মালিক মিঠু মিত্রও বাড়ির বয়স সঠিক ভাবে জানাতে পারেননি। তবে কমবেশি একশো বছর হবে। তিনিও বলেন, ‘‘জীর্ণ বাড়ি ভেঙে ফেলাই উচিত। কিন্তু নানা কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। বাড়িটি পুরো ভেঙে ফেলে সেখানে নতুন বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা আছে।’’

৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতিপাড়া মোড়ের আর একটি বাড়ির দোতলার অংশ জীর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। ওই বাড়ির নীচের তলায় কয়েকটি দোকানও আছে। ফলে ক্রেতা বিক্রেতাদের আনাগোনা লেগেই থাকে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, তাঁতিপাড়া এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের ওই বাড়ির জীর্ণ দোতলা ভেঙে পড়লে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। ওই বাড়ির মালিকের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি।

পুরবাসীর দাবি, শহরের বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েকটি জীর্ণ বাড়ির খোঁজ মিলতে পারে। কংগ্রেসের রঘুনাথপুর শহর সভাপতি তারকনাথ পরামানিকের মতে, ‘‘পুরুলিয়া শহরে দুর্ঘটনার পরে রঘুনাথপুর পুরসভারও এই শহরে জীর্ণ বাড়িগুলি সম্পর্কে সমীক্ষা করা উচিত।তারপরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা দরকার।’’

পুরপ্রধান তরণী বলেন, ‘‘আপাতত একটি জীর্ণ বাড়িই পুরসভার নজরে ধরা পড়েছিল। সেটি নিয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ তিনি আগামী দিনে সমীক্ষার আশ্বাস দিয়েছেন।

তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা ঝালদাতেও। সেখানকার পুরসভা অবশ্য জীর্ণ বাড়ির খোঁজে ইতিমধ্যে সমীক্ষা চালিয়েছে। ঝালদার পুরপ্রধান তৃণমূলের সুরেশ আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমরা সমীক্ষা চালিয়ে ঝালদা শহরে কিছু জীর্ণ বাড়ির খোঁজ পেয়েছি। সেই সব বাড়ির মালিকদের নোটিস দিয়ে জীর্ণ বাড়ি ভেঙে ফেলতে বলা হচ্ছে। যদি তাঁরা কিছু না করেন, তাহলে পুরসভা ব্যবস্থা নেবে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর চিহ্নিত বাড়িগুলি রয়েছে ১২ নম্বর জেলেপাড়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরবাড়ি মোড়, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানডি বস্তি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মণ্ডপকুলি এলাকায়।

বাসিন্দাদের একাংশের কটাক্ষ, পুরসভা নিয়ন্ত্রিত মার্কেট কমপ্লেক্স-ও জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেটির অবস্থান শহরের প্রাণকেন্দ্র বাসস্ট্যান্ডের কাছে। ফলে সেই ভবন ভেঙে পড়লে বড় বিপর্যয় ঘটে যাবে। অথচ পুরসভা ওই ভবন সম্পর্কে উদাসীন।

পাল্টা পুরপ্রধান সুরেশের দাবি, ‘‘ওই কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের একাধিকবার নোটিস দিয়ে তাঁদের দোকান খালি করতে বলা হয়েছে। কিন্তা তাঁরা বেপরোয়া। তাই কিছুই করা যাচ্ছে না। তবে পুরসভা গুরুত্ব দিয়েই বিষয়টি দেখছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement