Muri Mela

দ্বারকেশ্বরের জল ছিটিয়ে মুড়ি খাচ্ছেন হাজার হাজার লোক! একশো পার করল বাঁকুড়ার ‘অদ্ভুত’ এই মেলা

অতীতের মুড়ি খাওয়ার ‘রেওয়াজ’ এখন উৎসবের চেহারা নিয়েছে। দ্বারকেশ্বর নদের চরে মুড়ি মেলায় মাতলেন হাজার হাজার মানুষ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫১
People eat puffed rice in Bankura at festival called Muri Mela

গল্প করতে করতে নদীর ধারে বসে মুড়ি খাওয়ার ‘উৎসব’। —নিজস্ব চিত্র।

রেওয়াজ ১০০ বছরের। তবে উচ্ছ্বাস একই রকমই আছে। শুক্রবার বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় দ্বারকেশ্বর নদের চরে মুড়ি মেলায় মাতলেন হাজার হাজার মানুষ। নদের চরে বালিতে গর্ত করে জল সংগ্রহ করে তা ছিটিয়ে রসিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মুড়ি খেলেন আট থেকে আশি।

Advertisement

বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় মুড়ি মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো। কী ভাবে এমন ‘অদ্ভুত’ মেলা শুরু? কেঞ্জাকুড়ায় দ্বারকেশ্বর নদের পাড়েই রয়েছে সঞ্জীবনী মাতার আশ্রম। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে হরিনাম সংকীর্তন শুরু হয় এখানে। শেষ হয় মাঘের ৪ তারিখ। আগে দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ সংকীর্তন শুনতে হাজির হতেন আশ্রমে। কথিত আছে, সে সময় কেঞ্জাকুড়া ছিল ঘন বনজঙ্গলে ঢাকা। হরিনাম শুনে সন্ধ্যা গড়িয়ে যেত। তার পর জঙ্গল পার করার কেউ সাহস দেখাতেন না। পরের দিন সকালে সঙ্গে আনা শুকনো মুড়ি দ্বারকেশ্বরের জলে ভিজিয়ে তা খেয়ে বাড়িতে ফিরতেন তাঁরা।

অতীতের সেই প্রয়োজন আজ আর না থাকলেও মুড়ি খাওয়ার ‘রেওয়াজ’ এখন উৎসবের চেহারা নিয়েছে। এখন আর শুধু হরিনাম সংকীর্তন শুনতে আসা মানুষ নন, কেঞ্জাকুড়া-সহ আশপাশের অন্তত কুড়িটি গ্রামের মানুষজন পরিবারের সবাইকে নিয়ে ৪ মাঘ দ্বারকেশ্বরের চরে চলে আসেন। সঙ্গে নেন মুড়ি। শীতের মিঠে রোদ পিঠে লাগিয়ে চলে জমিয়ে মুড়ি খাওয়া। মুড়ির অনুষঙ্গ হিসাবে তাঁরা সঙ্গে আনেন চপ, বেগুনি কিংবা অন্য কোনও তেলেভাজা। থাকে লঙ্কা, ঘুগনি, পেঁয়াজ, শসা, নারকেল, টম্যাটো, চানাচুর, তিল, নারকেল নাড়ু ইত্যাদি।

সুদূর কলকাতা থেকে কেঞ্জাকুড়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে মুড়ি মেলায় চলে এসেছিলেন নন্দিতা পাল। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছরই আত্মীয়ের মুখে এই মেলার কথা শুনতাম। কিন্তু সেটা যে এত বড় আকারে হয়, তার কোনও ধারণাই ছিল না।’’ সবার সঙ্গে নদীর চরে বসে জমিয়ে মুড়ি খেয়ে তিনি যে আনন্দ পেয়েছেন, তা কখনও ভুলতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন। কেঞ্জাকুড়ার স্থানীয় বাসিন্দা মধুমিতা দে কর্মকার আবার প্রতি বছরই মুড়ি মেলায় আসেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেঞ্জাকুড়ায় যত মেলা হয়, সেগুলোর মধ্যে সব থেকে জমজমাট এই মুড়ি মেলা। সারা বছর আমরা এই মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকি। এই সময় সব আত্মীয় আমাদের বাড়িতে চলে আসেন। তাঁদের সকলকে নিয়ে এ ভাবে মুড়ি খেয়ে মেলায় মেতে ওঠার অভিজ্ঞতার কোনও তুলনা হয় না।’’ নানা রঙের সোয়েটার এবং চাদরে মোড়া মানুষের ভিড় থেকে উচ্ছ্বাস ভেসে আসে— ‘‘আসছে বছর আবার হবে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন