—প্রতীকী চিত্র।
বিঘে পনেরো জমি, সাবমার্সিবল পাম্প এবং ঝাঁ চকচকে দোতলা পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও স্ত্রী এবং অবিবাহিতা দুই মেয়ের নামে সরকারি জমির পাট্টার জন্য আবেদন করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের মাঠপলশা অঞ্চল কমিটির সভাপতি মহম্মদ আসাদুজ্জামান ওরফে আতিকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এই মর্মে সাঁইথিয়ার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের (বিএলএলআরও) কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
অভিযোগকারীদের মধ্যে ভেলিয়ান গ্রামের কার্তিক মাহারা, মাঠপলশার কারিবুল হক, আনোয়ার শেখেরা জানান, এলাকায় তাঁদের মতো বহু ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। তাঁরা আবেদন করেও সরকারি জমির পাট্টা পাননি। অথচ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মহম্মদ আসাদুজ্জামান ধনী ব্যক্তি হয়েও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দুই মেয়ে এবং স্ত্রীর নামে সরকারি জমির পাট্টার আবেদন করেছেন বলে দাবি তাঁদের। বিষয়টি জানার পরেই ওই জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিলি করার জন্য সাঁইথিয়ার বিএলএলআরও অফিসে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, এর আগেও তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান মেয়ের নামে, মাঠপলশা পঞ্চায়েতের প্রধান সান্ত্বনা খাতুন-সহ শাসকদলের বেশ কিছু নেতা, কর্মীর বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে সরকারি জমির পাট্টা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁরা অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এ নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিরোধীরা।
প্রসঙ্গত, মূলত ভূমিহীনরা সরকারি জমি পাট্টার পাওয়ার অধিকারী। অভিযোগ, তার পরেও আসাদুজ্জামান সাঁইথিয়ার বিএলএলআরও অফিসে স্ত্রী হালিমা বিবির নামে স্থানীয় হরিশকোপা মৌজায় ২৭ শতক, দুই মেয়ে তামান্না ইয়াসিরা এবং অনিকা বুশরার নামে যথাক্রমে ভালিয়ান মৌজায় ১৬ শতক এবং একই মৌজায় ৩৪ শতক সরকারি জমি পাট্টা পাওয়ার আবেদন করেছেন বলে অভিযোগ।
বিজেপির স্থানীয় দায়িত্ব জেলা কোষাধ্যক্ষ উদয়শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রকৃত ভূমিহীনদের বঞ্চিত করে তৃণমূলের নেতা, কর্মীরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নামে, বেনামে সরকারি জমি হাতিয়ে নিচ্ছেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি প্রশাসনের গোচরে এনেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’
এই ঘটনায় শাসকদলেরও একাংশ অস্বস্তিতে পড়েছে। দলের সংখ্যালঘু সেলের ব্লক সভাপতি মহম্মদ ইউনুস বলেন, ‘‘এর আগে ব্লক সভাপতির মেয়ে এবং পঞ্চায়েত প্রধানের নামে সরকারি জমির পাট্টা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় জনমানসে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। ফের একই ঘটনায় মানুষের কাছে জবাবদিহির মুখে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি জেলা নেতৃত্ব জানাব।’’
আসাদুজ্জামানকে নিয়ে তৃণমূলে অস্বস্তি অবশ্য নতুন নয়। রাজ্য কমিটি মনোনীত প্রার্থীকে ভোটাভুটিতে হারিয়ে নিজের ভাইপোর স্ত্রীকে প্রধান করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তার জেরে দীর্ঘদিন পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। আসাদুজ্জামান অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি স্ত্রী এবং মেয়ের নামে পাট্টার আবেদন করিনি। তাই কিছু মন্তব্য করব না।’’
তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে দলগত সিদ্ধান্ত অনুসারে ব্যবস্থা নেব।’’ সাঁইথিয়ার ভারপ্রাপ্ত বিএলএলআরও তৈকত আলি বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’