Saumitra Kha

সেতু গড়তে মোদীকে চিঠি সাংসদের

কেন্দ্রের তরফে এই সংক্রান্ত কোনও চিঠি দফতরে আসেনি বলে জানিয়েছেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৫৪
প্রকাশঘাটে হিংজুড়ি আর গোপালপুরের মধ্যে পারাপার।

প্রকাশঘাটে হিংজুড়ি আর গোপালপুরের মধ্যে পারাপার। ছবি: শুভ্র মিত্র।

দ্বারকেশ্বর নদের উপরে বিষ্ণুপুরের প্রকাশঘাটে সেতু তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তারপরেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর কেন্দ্রের জলসম্পদ মন্ত্রককে সাংসদের দাবির প্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশ দিল।

Advertisement

সৌমিত্র বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশঘাটে সেতু তৈরির দাবির প্রেক্ষিতে পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের সেচ দফতরের কাছেও এ নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তবে অতীতে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কোনও প্রকল্পেই সহযোগিতা করেনি। আমার আবেদন, সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করা ছেড়ে সাধারণ মানুষের স্বার্থে রাজ্য সেচ দফতর প্রকাশঘাটে সেতু গড়তে কেন্দ্রকে সাহায্য করুক।”

যদিও কেন্দ্রের তরফে এই সংক্রান্ত কোনও চিঠি দফতরে আসেনি বলে জানিয়েছেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের তরফে কোনও চিঠি পাইনি। সাংসদকে বলব, ফাঁকা আওয়াজ না দিয়ে চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। চিঠি পেলে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ করব।”

রাজ্যের সেচমন্ত্রীর অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জন্য কেন্দ্র একটি পয়সাও দেয়নি। গঙ্গার ভাঙন রোধের পয়সাও আটকে দিয়েছে। সাংসদ একবার কেন্দ্রের দফতরের কাগজপত্রগুলি খতিয়ে দেখুন। তারপর কেন্দ্রের উন্নয়নের সদিচ্ছা নিয়ে কথা বলতে আসবেন।

এ দিকে, রাজনৈতিক তরজা ছেড়ে যাতায়াতের সমস্যা মেটাতে প্রকাশঘাটে দ্বারকেশ্বর নদের উপরে দ্রুত সেতু গড়তে উদ্যোগী হতে দাবি তুলেছেন সাধারণ মানুষ। বছরের অন্যান্য সময় নদীর উপর অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করে পারাপার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্ষার প্রথম পর্যায়ে নৌকো চলাচল করলেও জল বাড়লে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। ওই এলাকায় সেতু গড়ে উঠলে কেবল বিষ্ণুপুর ব্লকের প্রকাশঘাটের মতো বেশ কয়েকটি গ্রামই নয়, ইন্দাস ও পাত্রসায়র ব্লকের অন্তত ৫০টি গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন।

বিষ্ণুপুরের উলিয়াড়ার বাসিন্দা বিলু রায়, প্রকাশ গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আলি খান, চন্দ্রকান্ত পাল, রুস্তম আলি খান, পাত্রসায়রের সাহজাজান মিদ্যারা বলেন, “বাম আমল থেকে সেতুর জন্য আবেদন জানিয়ে আসছি। রাজ্যের পালাবদলের সময় ২০১১ সালে বিষ্ণুপুরের বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও আমাদের সেতু তৈরির আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েও তিনি সেই দাবি মেটাননি। কেন্দ্র যদি এখানে সেতু গড়তে উদ্যোগী হয়, তাহলে রাজ্যও এগিয়ে আসুক। সেতু গড়ে উঠলে আমাদের গ্রামগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে।”

প্রকাশঘাটে সেতু না থাকায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন খোদ তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান মনিকা গোস্বামী। তিনি জানান, কিছু দিন আগেই তাঁর বৃদ্ধ শ্বশুরকে সাপে কাটে। বর্তমানে দ্বারকেশ্বরের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় নৌকো পারাপার বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ১২ কিলোমিটার ঘুরপথে সাপে কাটা ওই ব্যক্তিকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।

মনিকা বলেন, “সেতু হলে লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবেন। আমরা বর্ষায় ব্লক সদর বিষ্ণুপুরের সাথে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকি। প্রধান হিসেবে প্রায় প্রতিটি প্রশাসনিক বৈঠকেই আমি নিজে সেতুর দাবি তুলে আসছি।” বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কখনও রাজনীতি দেখে না। কেন্দ্রের তরফেই বিভিন্ন প্রকল্প আটকে রাখা হয়েছে।” সে দাবি মানেননি বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement