Bagtui

তোলার দাপট নেই, বগটুইয়ের দিন কি বদলাবে

ক্ষমতার মধুভাণ্ডের দখলদারিই বগটুইয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রধান কারণ বলে সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে।

Advertisement
 অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৩ ০৭:২৬
বগটুই কাণ্ডের এক বছর পার।

বগটুই কাণ্ডের এক বছর পার। — ফাইল চিত্র।

রামপুরহাট শহর লাগোয়া গ্রাম। গ্রামে নেই কোনও পাথরশিল্প, কয়লা বা বালি খাদান। অথচ এই বগটুই গ্রামেই ঠিক এক বছর আগে ১০ জনকে পুড়িয়ে-কুপিয়ে খুনের ঘটনায় উঠে এসেছিল বালি-পাথর থেকে তোলা আদায়ের বখরা নিয়ে গণ্ডগোলের তত্ত্ব! সেই হত্যাকাণ্ডের বছর পেরিয়ে বগটুই এখন অনেকটাই শান্ত। কিন্তু, এখনও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার থেকে চুরি-ছিনতাই-বোমাবাজি ঘটনায় বগটুইয়ের নাম বারবার উঠে আসছে।

২০২২-এর ২১ মার্চ রাতে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে, বগটুই মোড়ে চায়ের দোকানে বোমা মেরে খুন করা হয় রামপুরহাট ১ ব্লকের বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও তৃণমূল নেতা ভাদু শেখকে। ওই রাতেই বগটুই গ্রামে ভাদু-বিরোধী ১০টি বাড়িত আগুন লাগানোর অভিযোগ ভাদুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। তাতে ১০ জনের মৃত্যু হয়। বীরভূমের এক অখ্যাত গ্রাম বগটুই সেই থেকে চলে এল রাজ্য রাজনীতির শিরোনামে। ওই বছরই ডিসেম্বরে সিবিআইয়ের হেফাজতে মারা গেলেন ভাদু শেখের সঙ্গী ও বগটুই হত্যায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লালন শেখ (বড়)। বগটুই ফের এল রাজনীতির তরজার কেন্দ্রে।

Advertisement

ক্ষমতার মধুভাণ্ডের দখলদারিই বগটুইয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রধান কারণ বলে সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে। সিবিআইয়ের দাবি, বালি-পাথরের ট্রাক থেকে তোলার বখরা নিয়ে বিবাদের জেরেই খুন হয়েছিলেন ভাদু। তারই বদলায় ১০ জনকে হত্যা। এই ‘তোলাবাজি’র কারবার বগটুইয়ের হিংসা-হানাহানির মূল কারণ বলে অভিযোগ বিরোধীদেরও। ভাদু ও লালনের বিরোধী হিসাবে পরিচিত সোনা শেখ, পলাশ খানরা বর্তমানে জেল হেফাজতে। ভাদুর তোলাবাজির ব্যবসা দেখভাল করতেন যাঁরা, তাঁদের অধিকাংশই এখন বগটুই হত্যাকাণ্ডে জেলে রয়েছেন। আরও অনেক ভাদু-অনুগামী গ্রামের বাইরে।

এই অবস্থায় ভাদু ও লালন শেখের অবর্তমানে তোলার কারবার অনেকটাই কমেছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। সেই ভয় বা হুমকির পরিবেশও নেই বলে অনেকে জানাচ্ছেন। পুলিশ-প্রশাসনেরও দাবি, বগটুই হত্যাকাণ্ডের পরে লাগাতার সেখানে পুলিশি পাহারা থাকায় অপরাধ কমেছে। গ্রাম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার থেকে বিভিন্ন চুরি ছিনতাইয়ের কাজে যুক্ত অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বগটুই গ্রামে এক বছরের মধ্যে নতুন করে তাই বড় কোনও অশান্তি ঘটেনি।

তবে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে বগটুই ফের অশান্ত হবে না, এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ভাদু ও লালন শেখের মতো কয়েক জনকে ‘কাজে লাগিয়ে’ রামপুরহাট শহর এবং রামপুরহাট থানা এলাকায় প্রভাব খাটিয়েছেন শাসদলের একাংশ নেতা। কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন, স্কুল, সমবায় সমিতির নির্বাচন, বাসস্ট্যান্ডে দখলদারির মতো কাজে ভাদুর অনুগামীরা কাজ করেছেন। এলাকায় ভাদু-লালনদের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছিল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে শুরু করে রামপুরহাট পুরসভা নির্বাচনেও বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়া কিংবা জোর করে মনোনয়ন তুলে নেওয়ার মতো অভিযোগও উঠেছে ভাদুরদলবলের বিরুদ্ধে।

সামনে ফের পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে বগটুই-কাণ্ডের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে লাভের ফসল তোলার চেষ্টায় মাঠে নেমেছে তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাদু শেখ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হয়েছিলেন। ভাদু লালনদের অবর্তমানে বগটুই গ্রামের চারটি আসনে ইতিমধ্যেই তিন জন করে মোট ১২ জন প্রার্থী ঠিক করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের বড়শাল অঞ্চল সভাপতি বসন্ত ভট্টাচার্য। দলের রামপুরহাট ১ ব্লক সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, ‘‘বগটুই গ্রামে বিরোধী দল এখন রাজনীতি করতে এসেছে। কিন্তু, গ্রামের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কোনও না কোনও ভাবে উপকার পেয়েছেন। তাঁরা উন্নয়নের পক্ষেই আছেন।’’

অন্য দিকে, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণের দাবি, ‘‘বগটুইয়ে তৃণমূলের হাতে তৃণমূল খুন হয়েছে। এই নৃশংস ঘটনা পশ্চিমবঙ্গবাসীর মাথা হেঁট করেছে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ এর জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতহয়ে আছেন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement