Viswa Bharati University

সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠের ভাষণে বিতর্ক বিশ্বভারতীতে

বিক্ষোভ হটাতে গিয়ে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বচসা ও ধস্তাধস্তি হল এসএফআই সদস্য-সমর্থকদের। এসএফআইবিশ্বভারতীর ‘গৈরিকীকরণের’ চেষ্টার অভিযোগে সরব হয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৪৭
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

বিশ্বভারতীতে একটি আলোচনাসভায় বক্তৃতা দিতে এসে এসএফআইয়ের তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়লেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা তথা বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। বিক্ষোভ হটাতে গিয়ে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বচসা ও ধস্তাধস্তি হল এসএফআই সদস্য-সমর্থকদের। এসএফআইবিশ্বভারতীর ‘গৈরিকীকরণের’ চেষ্টার অভিযোগে সরব হয়েছে।

Advertisement

সম্প্রতি বাংলা-সহ কয়েকটি ভাষাকে ‘ধ্রুপদী’ ভাষার মর্যাদা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই স্বীকৃতির ফলে ভাষাগুলি কী ভাবে আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে শুক্রবার বিশ্বভারতীর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে বিশ্বভারতীর ভাষা ভবন ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তরফে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রধান ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়, ভাষাভবনের অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন প্রধান এবং আরএসএসের একাধিক কার্যকর্তা।

অনির্বাণ বক্তৃতা শুরু করতেই এসএফআইয়ের বিশ্বভারতী লোকাল কমিটির সদস্যেরা বিক্ষোভ দেখান, স্লোগান দেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিজেপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এই আলোচনাসভা চালাচ্ছেন। অনির্বাণকে ঘিরেও দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়। বাধা দিতে এলে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। যদিও নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের হটিয়ে দেন। এর পরে লিপিকা প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এসএফআইয়ের সদস্যেরাঅবস্থান-বিক্ষোভ করেন।

প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সময়েও একাধিকবার বিশ্বভারতীতে বিজেপি এবং আরএসএসের কর্মীদের নিয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। ২০২০ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি এ রাজ্যেও যখন তীব্র প্রতিবাদ চলছে, তখন বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তকে ওই আইনের সমর্থনে ব্যাখ্যা দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিশ্বভারতীতে। ওই কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে রাত ছাত্র-বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়েছিলবিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

এসএফআই-এর সদস্য বাঁন্ধুলি কড়ার, দেবজিৎ বুট বলেন, “বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াতে আমরা গর্বিত। বিশ্বভারতী সে বিষয়ে আলোচনাসভা করতেই পারে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ যে ভাবে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত থাকা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথ ভাবে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, আমরা তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতীতে গৈরিকীকরণের চেষ্টা আমরা রুখব।”

এলাকার বিধায়ক ও কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বভারতীকে গৈরিকীকরণের চেষ্টা চলছে। বিশ্বভারতীর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটা কখনওই কাম্য নয়।” তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের বক্তব্য, ‘‘বিশ্বভারতীতে পড়াশোনার থেকে রাজনীতি বেশি হচ্ছে।”

অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “পড়ুয়াদের বিক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে তাঁদের জেনে রাখা উচিত, বিশ্বভারতী বিল নিয়ে প্রথম সরব হন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মানুষের বিচরণ হওয়া উচিত।’’ ভাষাভবনের অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন প্রধান বলেন, “এমন ধরনের একটি আলোচনাসভা হওয়া দরকার মনে করেই এর আয়োজন করেছিলাম। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে, এই ধরনের বিক্ষোভ বাঞ্ছনীয় নয়।”

আরও পড়ুন
Advertisement