Birbhum Fire Incident

ঘুমের মধ্যেই পুড়িয়ে মারার ছক! মৃত্যু হল মা ও পুত্রের, আশঙ্কাজনক পিতা, সেই বীরভূমেই বগটুইয়ের ছায়া

রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তিন জনকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ। আগুনে ঝলসে মৃত্যু হল মা ও পুত্রের। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন পিতা। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের বোলপুর থানা এলাকায়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বোলপুর ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ১০:০০
এই ঘরেই আগুন লাগানো হয়।

এই ঘরেই আগুন লাগানো হয়। —নিজস্ব চিত্র।

রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তিন জনকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ। আগুনে ঝলসে মৃত্যু হল মা ও পুত্রের। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন পিতা। নৃশংস এই ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের বোলপুর থানা এলাকার রায়পুর সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুনগীত গ্রামে। এই ঘটনা অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে বগটুইকাণ্ডের কথা। ঘটনাচক্রে, ওই ঘটনাটিও ঘটেছিল এই বীরভূম জেলাতেই।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়াদাওয়া করে এক তলা বাড়িতে জানলা খুলে ছোট ছেলে আয়ান শেখ (৪) কে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন নতুনগীত গ্রামের বাসিন্দা বছর চল্লিশের শেখ তুতা। ঘরে ছিলেন স্ত্রী রূপা বিবি (৩০)-ও। অভিযোগ, কেউ বা কারা জানলা দিয়ে কেরোসিন তেল ছিটিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে পালায়। রূপা বিবির চিৎকার-চেঁচামেচিতে দৌড়ে আসেন পাশের ঘরে শুয়ে থাকা তাঁর বড় ছেলে শেখ রাজ। চেঁচামেচি শুনে গ্রামের লোকজনও বাড়ির সামনে জড়ো হন। তত ক্ষণে তিন জনই আগুনে ঝলসে যান বলে গ্রামবাসীদের দাবি। কাঁদতে কাঁদতে বড় ছেলে রাজ বলেন, “চিৎকার শুনে রাত দেড়টা নাগাদ দৌড়ে এসে দেখি মা, আব্বা আগুনে ঝলসে গিয়ে ছটফট করছে। ঘরে কেরোসিনের গন্ধ ছিল। কিছুই করতে পারলাম না।” অগ্নিদগ্ধ তিন জনকে প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তার পরেই তাঁদেরকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে প্রথমে রূপা বিবির ছোট ছেলে আয়ানের মৃত্যু হয়। মৃত্যু হয় রূপারও। যদিও এখনও হাসপাতালে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তুতা শেখ। এই ঘটনার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই ঘটনাস্থলে যায় বোলপুর থানার পুলিশ। এই ঘটনা ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যেও। শুক্রবার সকালেও এলাকায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে খুনের চেষ্টা, না কি অন্য কোন চক্রান্ত, তা খতিয়ে দেখছে বোলপুর থানার পুলিশ।

শেখ তুতার ভাই শেখ উজির বলেন, “দাদা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়।ব্যবসায়িক কারণেই দাদার শোয়ার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাদার জেসিবি মেশিন এবং ট্র্যাক্টরের ব্যবসা আছে। সেই নিয়েই হয়তো শত্রুতা। আমরা প্রথমে মনে করেছিলাম, বাড়িতে শর্ট সার্কিট হওয়াতেই আগুন লাগে। কিন্তু দেখলাম সুইচ বোর্ড এবং এসি মেশিন সবই অক্ষত আছে। জানালা দিয়ে কেরোসিন তেল ছুড়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২১ মার্চ রাতে বীরভূমের রামপুরহাট থানার ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৎকালীন উপপ্রধান ভাদু শেখকে। সেই রাতেই ভাদুর অনুগামীরা বগটুইয়ের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তাতে মৃত্যু হয় ১০ জনের। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বগটুই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পায় সিবিআই। সেই সময় এই ঘটনাকে ঘিরে আলোড়িত হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি।

আরও পড়ুন
Advertisement