Criminal racket

‘পেপসি’র সিন্ডিকেট কি আবার সক্রিয়!

শালতোড়ায় অবৈধ পাথর খাদান যেমন রয়েছে, তেমনই অবৈধ কয়লা খাদানও রয়েছে। সে সব জায়গায় খননের জন্য বিস্ফোরকের ব্যবহার হয়।

Advertisement
রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শালতোড়া শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৮
নিহত জয়দেব।

নিহত জয়দেব। নিজস্ব চিত্র।

বিস্ফোরক পাচারের কারবার তলে তলে যে চলছে তা এর আগে ইতি-উতি সামনে এসেছে। খাদানে বিস্ফোরণের জন্য ব্যবহৃত ডিটোনেটর, জিলেটিন স্টিকও বছর খানেক আগে পুলিশ নিয়মিত উদ্ধার করত। কিন্তু শুক্রবার রাতে মোটরবাইকে বিস্ফোরণে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার পরে ওই চক্র যে সক্রিয়, সে অভিযোগ ফেল সামনে এল। দাবি উঠেছে, অবিলম্বে বিস্ফোরক পাচারের কারবার বন্ধ করতে হবে।

Advertisement

শালতোড়ার নানা এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়, অবৈধ বিস্ফোরক বেচা-কেনার কারবার দীর্ঘ দিনের। এর সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন এক শ্রেণির মানুষ। যাঁদের বেশির ভাগের কাছেই এই ব্যবসা কার্যত আংশিক সময়ের কাজ। বিশেষ সূত্রে দাবি, সাধারণত কিছু ব্যক্তি সিন্ডিকেট গড়ে ভিন্‌ জেলা থেকে বিস্ফোরক নিয়ে এসে গোপনে বিক্রি করেন। জঙ্গলের গোপন জায়গায় থাকে ডেরা। কারবারিদের কাছে ‘জিলেটিন স্টিক’ স্থানীয় ভাবে ‘পেপসি’ নামে পরিচিত। বিস্ফোরক বাইরে থেকে নিয়ে এসে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার পর মোটা অঙ্কের কমিশন মেলে। সাধারণত কমিশনের টাকা সিন্ডিকেটের অনেকের হাতেই যায়। তবে যে ‘পার্টি’ অর্থাৎ ক্রেতা নিয়ে আসবে, তাঁর কমিশনের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে। আবার ক্রেতারা পুরনো হয়ে গেলে সরাসরি সিন্ডিকেটের ডেরাতেও যোগাযোগ করে বিস্ফোরক কেনেন।

শালতোড়ায় অবৈধ পাথর খাদান যেমন রয়েছে, তেমনই অবৈধ কয়লা খাদানও রয়েছে। সে সব জায়গায় খননের জন্য বিস্ফোরকের ব্যবহার হয়। অবৈধ খাদান থেকে পাথর ও কয়লা তোলার কাজে বেশি রোজগার হত বলে গোড়ার দিকে বছরে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে শালতোড়ার বহু এলাকার বাসিন্দা আগ্রহ দেখাননি। তবে কয়েক বছর আগে সরকারি ভাবে শালতোড়ার পাথর খাদান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ক্রাসার ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন। কাজ হারিয়ে ভিন্‌ রাজ্যে গিয়েছেন শ্রমিকেরা। তবে অবৈধ ভাবে পাথর তোলার কাজ পুরোপুরি যে বন্ধ হয়েছে, তা মানতে নারাজ স্থানীয়দের একাংশ।

তবে বৈধ ভাবে ক্রাসার মেশিন চালানোর জন্য সরকারি ছাড়পত্র চেয়ে ব্যবসায়ীরা দাবি তুলে আসছেন দীর্ঘ দিন। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আগে জেলায় নবজোয়ার কর্মসূচিতে এসে শালতোড়ায় পাথর ব্যবসায় যুক্ত মানুষজনের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারি ভাবে ব্যবসা চালু করতে উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সেই ছাড়পত্র এখনও মেলেনি। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারি ছাড়পত্র না মিললেও অবৈধ ভাবে পাথর ব্যবসা ফের শুরু হয়েছে শালতোড়ায়। তার জেরেই বিস্ফোরকের চাহিদাও তৈরি হচ্ছে নতুন করে।

যদিও পুলিশ সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে। তবে পুলিশ এটাও স্বীকার করছে, ২৭ জুলাই শালতোড়ার একটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে তারা বেশ কিছু পরিমাণ জিলোটিন স্টিক উদ্ধার করে। লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বাঁকুড়া পুরুলিয়া সীমান্ত শালতোড়ার মুরলু ও কলাজুড়িতে নাকা চেকিং-এ জোর দেওয়া হয়। জুলাইয়ে বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ার পরে নজরদারি আরও বাড়ানো হয় ওই দু’টি নাকা পয়েন্টে।

সূত্রের দাবি, এই পরিস্থিতিতে পুলিশের চোখে ধুলো দিতেই গোপন পথ দিয়ে পুরুলিয়া থেকে বিস্ফোরক আমদানি শুরু করেছে দুষ্কৃতীরা। সেক্ষেত্রে রাস্তা ভালো না হওয়ায় গাড়ির বদলে মোটরবাইকে পরিবহণ করা হচ্ছে বিস্ফোরক। শুক্রবার রাতেও সে ভাবেই বিস্ফোরক নিয়ে আসা হচ্ছিল বলে তদন্তকারীদের
একাংশের প্রাথমিক অনুমান। তবে মোটর বাইকে কী ভাবে বিস্ফোরণ হয়ে গেল সেই উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

পুলিশের একটি বিশেষ সূত্রে দাবি, ওই ব্যক্তি বিস্ফোরক কারবারে যুক্ত ছিলেন কি না, কোথা থেকে বিস্ফোরক নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছিল এ সবের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মৃতের ফোনের কল রেকর্ডের তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারির দাবি, “পাথর খাদানে যাতে অবৈধ ভাবে কাজ না হয় তার জন্য ইতিমধ্যেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। অবৈধ বিস্ফোরক নিয়ে কারবার বন্ধ করতে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অভিযান চালিয়ে পুলিশ সফলও হয়েছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে মোটরবাইকেও বিস্ফোরক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কি না সেটাও তদন্ত করে দেখছি।”

আরও পড়ুন
Advertisement