তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে ধৃতদের আদালতে তোলার আগে, থানা থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আনা হয়েছে। সোমবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
শান্তিনিকেতনের কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সমীর থান্দারকে পিটিয়ে খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই খুন হতে হয়েছে সমীরকে। নিহতের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যেরা অবশ্য সে-কথা মানছেন না। তাঁদের দাবি, খুনের পিছনে ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। জেলা পুলিশও খুনের কারণ নিয়ে কিছু বলেনি।
পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতেই এক দম্পতি-সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। ধৃতেরা হলেন সবিতা দাস, তাঁর স্বামী সঞ্জিত দাস ওরফে ভটু, বাবলু হালদার, কৃষ্ণ দলুই, সঞ্চিতা দলুই ও শিলা দাস নামে ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, এই সবিতার সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ গড়ে উঠেছিল নিহত সমীরের এবং সেই ‘সম্পর্কের’ টানাপড়েনেই খুন হতে হয়েছে ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সোমবার অভিযুক্তদের বোলপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী ফিরোজ কুমার পাল বলেন, “বিচারক ধৃতদের জামিনের আবেদন খারিজ করে, দু’দিনের পুলিশে হেফাজতের
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কঙ্কালীতলার পারুলডাঙার বাসিন্দা ও পঞ্চায়েত সদস্য সমীর থান্দারকে শনিবার রাতে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে, উত্তরনারায়ণপুর এলাকা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ভোরের দিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই রবিবার বিকেলে মৃত্যু হয় সমীরের। পরিবারের ও প্রতিবেশীদের অনুমান পিটিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁকে। তবে কেন এই খুন তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় সকলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সমীরের একাধিক স্ত্রী। দুই স্ত্রী সমীরের বাড়িতে থাকেন। এর পরেও উত্তরণায়নপুর গ্রামের সবিতা দাসের সঙ্গে সমীরের ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ গড়ে উঠেছিল বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি। সবিতার স্বামী সঞ্জিত বাইরে কাজ করায় বেশির ভাগ সময় সবিতা বাড়িতে একাই থাকতেন। সেই সুবাদে প্রায়ই তাঁর বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল এই তৃণমূল নেতার। এলাকার বাসিন্দারা জানান, শনিবারও পঞ্চায়েত থেকে ফিরে এসে রাতে সবিতার বাড়ি সমীর গিয়েছিলেন।
পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা যাচ্ছে, সবিতার স্বামী-সহ পরিবারের লোকজন ওই দু’জনকে এক সঙ্গে দেখে ফেলেন। শুরু হয় বচসা। বচসা থেকে মারধর। সেই মারের আঘাতেই সমীরের মৃত্যু হয়। এ দিন উত্তরনারায়ণপুরে গিয়ে দেখা গেল, পুলিশের একটি টহলদারি ভ্যান রয়েছে সেখানে। সবিতা-সঞ্জিতের বাড়ি তালাবন্ধ। পড়শিদের একাংশের দাবি, শনিবার ওই বাড়িতেই সমীরকে মারধর করে পরে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছিল।
সমীরের দুই স্ত্রী অবশ্যই দাবি করেছেন, এই খুনের পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। প্রথম পক্ষের স্ত্রী বলেন, “ষড়যন্ত্র ছাড়া এই ভাবে মারার কোনও কারণ থাকতে পারে না। আমার মনে হয় ও কিছু জেনে ফেলেছিল, সে টাকাপয়সা সংক্রান্ত হোক বা জমি-জায়গা। যার জন্য ওর মুখ বন্ধ করা দরকার ছিল।’’ তাঁর দাবি, গত কয়েক দিন সমীরকে বেশ চিন্তিত দেখাত। সমীরের আর এক স্ত্রী দাবি করেছেন, “শনিবার রাতে উত্তরানারায়ণপুর থেকে ফোন পেয়ে আমি কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখনই কিছুজন আমাদের হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোর স্বামীকে আর বাঁচতে দেব না’। এর পরে সেখানে গিয়ে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় আমার স্বামী রাস্তায় পড়ে রয়েছে। এই খুনের পিছনে অবশ্যই ষড়যন্ত্র আছে।’’
ওই দুই মহিলাই সমীরের অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন। সমীরের এক ছেলে পলাশ থান্দার বলে, “বাবাকে শনিবার রাতে ফোন করেছিলাম। ফোনে কথা বলতে বলার সময় কিছু লোকের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। তখনই বুঝতে পারি, কিছু একটা অঘটন ঘটতে চলেছে।” এ দিনই সন্ধ্যায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের পরে সমীরের দেহ এসে পৌঁছয় গ্রামে।