Pritam Mondal

বাবা ‘খুন শাহজাহানের হাতে’, উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৮৩ পেলেন পরিবার নিয়ে গ্রামছাড়া সন্দেশখালির প্রীতম!

প্রীতমের স্বপ্ন আইপিএস হওয়ার। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি নিতে চাইছেন। পুত্রকে দিল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রীতমের মা পদ্মা।

Advertisement
সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৪ ১২:৩০
(বাঁ দিকে) প্রীতমের বাবা প্রদীপ মণ্ডল। প্রীতম মণ্ডল (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) প্রীতমের বাবা প্রদীপ মণ্ডল। প্রীতম মণ্ডল (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

বাবা খুন হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। শাহজাহান শেখ এবং তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। বাবাকে হারিয়েও নিজের লক্ষ্যে অটল ছিলেন তিনি। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির সেই প্রীতম এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৮৩ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রীতমের স্বপ্ন আইপিএস হওয়ার। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়াই এখন তাঁর লক্ষ্য। তাই তিনি ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি নিতে চাইছেন।

Advertisement

প্রীতম মণ্ডল। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। কলা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ২০২১ সাল থেকে মা এবং ভাইকে নিয়ে গ্রামছাড়া। যে সন্দেশখালি, যে শাহজাহান এবং তাঁর বাহিনী নিয়ে গোটা রাজ্য সরগরম, সেই শাহজাহানের হাতেই খুন হয়েছিলেন প্রীতমের বাবা প্রদীপ মণ্ডল। অভিযোগ অন্তত তেমনই। শাহজাহানের ভয়ে গ্রাম ছেড়েছিলেন প্রীতমেরা। তার পর আর পাকাপাকি ভাবে গ্রামে ফেরেননি তাঁরা।

প্রীতমেরা দুই ভাই। ভাই অনুভব এ বার দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠেছে। সন্দেশখালি ১-এ থাকত প্রীতমদের পরিবার। গ্রামে একটা দোকান ছিল। কিছু জমিজমা, ভেড়িও ছিল। তা দিয়েই সংসার ভাল ভাবে চলে যাচ্ছিল। প্রীতমদের ভাল স্কুলেও ভর্তি করিয়েছিলেন তাঁদের বাবা প্রদীপ। কিন্তু ২০১৯ সালে তাঁদের জীবনে নেমে এসেছিল নিকষ অন্ধকার। ওই বছরেই শাহজাহান এবং তাঁর বাহিনীর হাতে খুন হয়েছিলেন প্রদীপ। অভিযোগ, প্রদীপকে গুলি করে খুন করা হয়।

প্রীতমের মা পদ্মা মণ্ডল জানিয়েছেন, ২০২১ সালে তাঁরা সন্দেশখালি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। পুত্রদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই। প্রদীপের মৃত্যুর পর থেকে আর্থিক অনটনের মধ্যে সংসার চালাতে হচ্ছে। কিন্তু দুই পুত্রের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে ঝুঁকি নিয়ে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল বলেই জানিয়েছেন পদ্মা। তিনি বলেন, “২০২১ সালে বাড়িতে হামলা চালানো হয়। দোকান ভাঙচুর চালানো হয়। সব কিছু লুটপাট করে নেওয়া হয়।” সেই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে সন্দেশখালি ছাড়েন প্রীতমরা।

পদ্মা আরও জানিয়েছেন, গ্রামে এখনও কিছু জমি এবং ভেড়ি রয়েছে। সেগুলি লিজ়ে দেওয়া। মাঝেমধ্যে সেগুলি দেখাশোনা করতে গ্রামে যেতে হয় বটে, তবে নিয়মিত যাতায়াত হয় না। সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এখনও অনেকেই গ্রামে রয়েছেন। ফলে আতঙ্ক তো একটা রয়েইছে বলে জানিয়েছেন পদ্মা। তবে সেই সব আতঙ্কের মধ্যেও দুই সন্তানকে বড় করে তোলার লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পদ্মা বলেন, “প্রীতমের বাবাও চাইত ওর দুই ছেলে ভাল কিছু করুক। প্রীতম আজ ভাল রেজাল্ট করেছে। ওর বাবা থাকলে খুব খুশি হত।”

প্রীতমের প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল আইপিএস হওয়ার। বার বারই এ কথা জানিয়েছেন তাঁর মাকে। তাই ইউপিএসসি নিয়ে প্রস্তুতি নিতে চান তিনি। প্রীতমকে ইউপিএসসি পড়ানোর জন্য দিল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁর মা পদ্মা।

গ্রামে ফেরার কথা কি ভাবছেন? পদ্মা বলেন, “এখনও অভিযুক্তেরা বাইরে। ফলে এখনই সেখানে পাকাপাকি ভাবে ফেরার প্রশ্ন নেই।”

আরও পড়ুন
Advertisement