Cyclone Dana

দিঘায় সমুদ্রে নামতে বাধা পর্যটকদের, চলছে মাইক নিয়ে ঘোষণা, উপকূলবর্তী দুই জেলায় সতর্ক প্রশাসন

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে সকাল থেকে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। দিঘা, বকখালি, সাগরের মতো উপকূলবর্তী এলাকায় সকাল থেকেই মাইক নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
দিঘা ও ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৫৯
শুনশান দিঘার সমুদ্রসৈকত। বৃহস্পতিবার সকালে।

শুনশান দিঘার সমুদ্রসৈকত। বৃহস্পতিবার সকালে। ছবি: পিটিআই।

ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’র মোকাবিলায় পুরনো অভিজ্ঞতার উপরেই জোর দিতে চাইছে রাজ্যের উপকূলবর্তী দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। দুই জেলার স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে অন্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে উপায়ে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছিল, এ বারেও সেগুলিই প্রয়োগ করা হচ্ছে।

Advertisement

অধিকাংশ পর্যটক ইতিমধ্যেই দিঘার হোটেল ছেড়ে বাড়ির পথ ধরলেও কিছু অত্যুৎসাহী পর্যটক এখনও হোটেলে বসে রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। বৃহস্পতিবার বেলার দিকে তাঁদের কয়েক জন সমুদ্রের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাঁশের ব্যারিকেড থাকায় সৈকতে নামতে পারেননি তাঁরা। সমুদ্রে যাতে কেউ নামতে না পারেন, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে নজর রাখা হচ্ছে। সকালের দিকে সৈকত সংলগ্ন কয়েকটি দোকান খুললেও পরে প্রশাসনের লোকজন গিয়ে সেগুলি বন্ধ করান।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রায় একই ছবি দেখা গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বকখালিতেও। বুধবার থেকেই সেখানে সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে। সমুদ্রে যাতে কেউ না নামতে পারেন, তা দেখার জন্য সৈকতে পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। দুই জেলাতেই উপকূলবর্তী নিচু এবং বিপজ্জনক এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানকার বাসিন্দাদের ফ্লাড সেন্টার ও নিকটবর্তী স্কুলগুলিতে সরিয়ে নিয়ে যেতে সমস্ত প্রস্তুতি সেরে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গ্রামবাসীদের সরানোর কাজ পুরোদস্তুর শুরু হবে। এ ছাড়াও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও আপৎকালীন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “দিঘা সমূদ্রসৈকত-সহ মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুরের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা কড়া সুরক্ষায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি নুলিয়া, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরও এলাকায় টহলদারি চালাচ্ছে। পর্যটকদের পাশাপাশি সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার গ্রামবাসী এবং মৎস্যজীবীরা যাতে এই সময় সমুদ্রে না নামেন,তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে সকাল থেকে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। রায়চক এবং কুকড়াহাটির মধ্যে এবং ডায়মন্ড হারবার এবং কুকড়াহাটির মধ্যে নৌকা চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা শাসকের দফতরে খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও কুইক রেসপন্স টিমকেও।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

মঙ্গলবার পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল দিঘার সৈকত। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি, তাজপুরের হোটেলমালিকদের হোটেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায় কাকদ্বীপ, সাগর, বকখালি, দিঘায় মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। টোটোয় মাইক বেঁধে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দুই জেলায় নদী এবং সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী প্রচুর মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দিঘার হোটেল থেকে বসে ‘ডেনা’র ঝাপটা দেখার সুযোগ না মেলায় হতাশ পর্যটকেরা। তবে এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে নারাজ জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবারই প্রায় সারা দিন ধরে গঙ্গাসাগরের কচুবেড়িয়া ঘাটে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা মাইকিং করে মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেন। ইতিমধ্যে যাঁরা সমুদ্রে চলে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দুই জেলা মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ওই দুই জেলায় মাঝেমধ্যে ঝোড়ো হাওয়াও বইছে। তবে এখনও পর্যন্ত সমুদ্র মোটের উপরে শান্ত রয়েছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে জেলা প্রশাসন।

আরও পড়ুন
Advertisement