Illegal Firearms

ভোটের বেলায় কাজি, ভোট ফুরোলে পাজি! ‘উল্টো স্রোতে’ ফিরছে অস্ত্র, বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া পুলিশ

রাজ্য পুলিশ এবং বিএসএফ গত এক মাসে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। তার মধ্যে নাইন এমএম, সেভেন এমএম পিস্তল-সহ ম্যাগাজ়িন এবং কার্তুজ় রয়েছে।

Advertisement
প্রণয় ঘোষ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:১৯
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সপ্তাহখানেক আগে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। পড়শি দেশে ভোট মিটতেই আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাঁটাতারবিহীন এলাকা দিয়ে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে ফেরত আসতে শুরু করেছে অস্ত্র! দুই জেলার ধৃত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের থেকে তেমনটাই জানা গিয়েছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। বিএসএফ সূত্রে দাবি, গোপন সূত্র মারফত অস্ত্র কেনাবেচার খবর পেয়ে সীমান্ত এলাকায় নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

Advertisement

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট মিটতেই অস্ত্রের ‘উল্টো স্রোত’ দেখা গিয়েছিল নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ জুড়ে। পুলিশ সূত্রে খবর, নির্বাচন সামনে থাকায় সেই সময় অস্ত্রের বিপুল চাহিদা ছিল বাংলাদেশে। আর তার জোগান দিয়েছিলেন এ রাজ্যের অস্ত্র কারবারিরা। রাজ্য পুলিশ এবং বিএসএফ গত এক মাসে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। তার মধ্যে নাইন এমএম, সেভেন এমএম পিস্তল-সহ ম্যাগাজ়িন এবং কার্তুজ় রয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছেন কয়েক জন। তাঁদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মূলত বিহারের মুঙ্গের থেকে আসে ওই সব অস্ত্র। সেগুলি পৌঁছে যায় সীমান্ত লাগোয়া ঝাড়খণ্ড, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনায়। তার পর সেখান থেকে কাঁটতার পেরিয়ে ও পারে।

পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশের ভোট মিটতেই সেই সব ‘অব্যবহৃত’ অস্ত্র জেলায় ফিরে আসছে। দুই জেলায় অস্ত্র কারবারের প্রবণতা বলছে, ভোট না থাকলে সেই অর্থে অস্ত্রের চাহিদাও থাকে না! তবুও সেই সব অস্ত্র কিনে নেন কারবারিরা। ধৃত কারবারিদের থেকে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, আসলে জেলার কারবারিরা মুখিয়ে থাকেন ভোটের জন্য। কারণ, সেই সময়ে অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, সম্প্রতি আসিফুর শেখ নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ী ধরা পড়েছেন। তিনি জেরায় জানিয়েছেন, নাইন এমএম পিস্তল সাধারণত বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে পারলে ৭০-৭৫ হাজার টাকা দাম মেলে। ৪৫- ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায় সেভেন এমএম পিস্তলে। এ ছাড়াও ওয়ান শাটার ও অন্যান্য পিস্তলের দাম ওঠে ১৫ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে।’’

বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা অস্ত্রে কি মুনাফার আশা রয়েছে? নদিয়ার ভীমপুর সীমান্তের এক অস্ত্র কারবারি জানান, মুঙ্গের থেকে কেনা অস্ত্র বাংলাদেশে পৌঁছে দিয়ে গড়ে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা মুনাফা হয়েছিল। এখন যে দামে পিস্তলগুলো আমরা ফেরত নিচ্ছি, কয়েক দিন চেপে রেখে সঠিক সময় বিক্রি করতে পারলে তা থেকেও অন্তত পক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মুনাফা হবে। ওই কারবারির কথায়, ‘‘বেআইনি ব্যবসায় ঝুঁকি তো সব সময় থাকবেই। তবে ধীরেসুস্থে ব্যবসা করলে ঝুঁকি অনেক কম। ও পার থেকে চাষের বস্তা, ব্যাগ কিংবা খড়ের গাদায় এ পারে অস্ত্র আসে। বিএসএফের নজরদারি এড়াতে সীমান্ত লাগোয়া ঝোপঝাড়ে রেখে দেওয়া হয় অস্ত্র। পরে বরাত পেলে সেই অস্ত্র সেখান থেকে সংগ্রহ করে অতি সন্তর্পণে পৌঁছে দেওয়া হয় ক্রেতাদের কাছে। এ সব করতে গিয়েও তো অনেকে ধরা পড়ে যান।’’

এই কারবার সম্পর্কে অবগত পুলিশ-প্রশাসন এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে জেলা জুড়েই লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে মুর্শিদাবাদের পুলিশ। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায় বলেন, ‘‘গোয়েন্দা এবং সূত্র মারফত পাওয়া খবরের ভিত্তিতে একাধিক জায়গায় নাকা তল্লাশি এবং তল্লাশি অভিযান চলছে। কোনও প্রকার বেআইনি অস্ত্রের কারবার জেলায় চালাতে দেওয়া হবে না।’’ বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্যও বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের সময় বেআইনি অস্ত্রের লেনদেন আটকাতে বিএসএফ অত্যন্ত তৎপর হয়ে কাজ করেছিল। বাকি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নজরদারি চলছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement