সোমবার ঠাকুরবাড়ির হরিচাঁদ মন্দির ছিল কার্যত সুনসান। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরকে ঘিরে মতুয়াদের দু’পক্ষের গোলমালে রবিবার তেতে উঠেছিল ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ি। তার আঁচ গিয়ে পড়েছিল চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালেও। সেখানে গোলমাল রাজনৈতিক চেহারা নেয়। তৃণমূল-বিজেপির দফায় দফায় মারপিট হয়। জখম হন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া, বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তৃণমুলের গোপা রায়-সহ দু'পক্ষের অনেকে। সেই গোলমালে জড়িত অভিযোগ পুলিশ আট জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে পাঁচ জন গোবরডাঙার বাসিন্দা।
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার হাসপাতালে হুজ্জুতির অভিযোগে শান্তনু, তাঁর দাদা তথা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর এবং শান্তনুর দেহরক্ষী কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, পুলিশের কাছ থেকে অভিযুক্তদের ছিনিয়ে নেওয়া এবং মহিলা পুলিশকর্মীকে নিগ্রহ করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন এফআইআরে জানিয়েছেন, রবিবার হাসপাতালে ঢুকে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। ধৃত আট জনকে সোমবার বনগাঁ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক পাঁচজনকে জেল হেফাজতে এবং তিন জনকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সোমবার ঠাকুরবাড়ি ছিল কার্যত সুনসান। কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী বা মতুয়া ভক্তদের দেখা মেলেনি। রবিবার ঘটনায় শান্তনু তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুললেও থানায় কোনও অভিযোগ জানাননি। তিনি সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। বিজেপির পক্ষ থেকেও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এমনকি, দলীয় সাংসদ ও বিধায়ক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বিজেপির পক্ষ থেকে কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়নি।
শান্তুনু গোলমালের ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন। সোমবার ঠাকুরনগরে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের মনে হয়, পুলিশ অভিযোগ নেবে? পুলিশ ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে চাকরি বাঁচিয়েছেন। কারণ, তাঁরা রাজ্য সরকারের অধীনে চাকরি করেন।’’ এরপরেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরবাড়িতে সন্ত্রাস চালিয়েছেন। বাংলার সংস্কৃতি, মতুয়াদের সংস্কৃতি নষ্ট করে দিয়েছেন। পুলিশ ও গুন্ডাদের দিয়ে তিনি দস্যুবৃত্তি চালিয়েছেন। সিবিআই তদন্তে গোলমালের মূল কারণ বেরিয়ে আসবে।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘কারা মন্দিরের পূজারীকে মারধর করে মন্দির থেকে বের করে দিল, কেন আমাকে ভক্তদের রক্ষা করতে ছুটে যেতে হল মন্দিরে, তা সিসিক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে।’’
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রামপদ দাসের সঙ্গে শান্তনুর বিরোধ বহুচর্চিত। রামপদ বলেন, ‘‘রবিবার মতুয়াদের উপর আক্রমণ হয়েছে। ওটা মতুয়াদের কর্মসূচি ছিল। আমরা মতুয়াদের সঙ্গে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। মতুয়ারা কোনও কর্মসূচি নিলে আমরা সমর্থন করব।’’
শান্তনুর অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘চোরের মায়ের বড় গলা। শান্তনুর অসভ্যতা, গুন্ডামি রবিবার ঠাকুরনগরের মানুষ দেখেছেন। আমাদের ৫ হাজার কর্মী-সমর্থক ছিলেন। ধর্মীয় স্থানে আমরা কোনও অশান্তি চাইনি। চাইলে ৫ মিনিট লাগত না উচিত শিক্ষা দিতে।’’ একইসঙ্গে বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘লোকসভা ভোটে জেতার পর থেকে শান্তনুর কোনও জনসংযোগ ছিল না। চুপচাপ ছিলেন। এলাকার উন্নয়ন করেননি। সামনে পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোট। তাই তাঁর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। গুন্ডামি, পাগলামো করে জনভিত্তি তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।’’ বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ মমতা ঠাকুরের অভিযোগ, ‘‘রবিবারের ঘটনার পর থেকে শান্তনুরা আমাকে প্রাণনাশ এবং বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।’’ শান্তনু অভিযোগ মানেননি।