ধুলিয়ানে টহল বাহিনীর। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ থানায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এডিজি দক্ষিণবঙ্গ রবি গান্ধী সোমবার দুপুর ১টায় বললেন, ‘‘কোথাও গোলমাল নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’ আধ ঘণ্টা পরে তেমন দাবি করল পুলিশও। তবে তার দু’ঘণ্টার মধ্যে এই থানা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে জাফরাবাদ উত্তপ্ত হয়ে উঠল। ছুটে গেল বাহিনী।
থমথমে সকালের পরে ধুলিয়ানে অবশ্য সামান্য কিছু দোকানপাট বেলা গড়াতে খোলে। বর্ষবরণের আগের দিন মিষ্টির দোকান, বাজারে অল্প হলেও ক্রেতা দেখা গেল বিকেল-সন্ধ্যা নাগাদ। তিন দিন বন্ধ থাকার পরে এ দিন বিড়ি জমা নেওয়াও শুরু হয়েছে। হাতে বাঁধা বিড়ি নিয়ে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে শমসেরগঞ্জের জালাদিপুরে।
কিন্তু ঝাঁপ বন্ধ ছিল বাজারের বেশির ভাগ দোকানে। সকালে দুধও মেলেনি। ফেরিওয়ালার ডাক কানে আসেনি। বরং, বাহিনীর ভারী বুটের শব্দ ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জের পাড়ায় পাড়ায় শোনা গিয়েছে। থানা থেকে দশ মিনিট দূরের একটি পাড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারাও নিজেদের এলাকা রক্ষা করতে অনেক ক্ষণ রাস্তায় ছিলেন।
ধুলিয়ানে শিবমন্দিরের কাছে এ দিন ওষুধের দোকান খোলেন জিয়াউল হক। বলেন, ‘‘আমাদের শহরে সম্প্রীতিই স্বাভাবিক। পরিস্থিতি এখন অনেক শান্ত। তাই দোকান খুলেছি।’’ হোমিওপ্যাথির ক্লিনিক খোলেন সুজন রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘ধুলিয়ানে আমরা এক সঙ্গে মিলেমিশে পরিবারের মতো থাকি। সেটা হয়তো কারও সহ্য হচ্ছে না।’’ ধুলিয়ান বাজারে সকালের পরে চালের দোকান খোলেন সাধন সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘সাধারণ মানুষের খাওয়ার যেন কষ্ট না হয়, তাই দোকান খুলেছি। রাস্তায় পুলিশ রয়েছে বলে ভরসা পাচ্ছি।’’ ধুলিয়ান ঘোষপাড়ায় শমসেরগঞ্জে থানার পাশে বেলা করে হলেও মিষ্টির দোকান খোলেন হুমায়ুন মোমিন। তিনি বলছেন, ‘‘যা হল, তাতে ভয়ে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। ক্ষতি হলেও ব্যবসা শুরু করেছি। পরিস্থিতিএখন শান্তই।’’
তবে ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জে সব রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এ দিন বন্ধ ছিল। কাঞ্চনতলা জেডিজেএ ইন্সটিটিউশনের প্রধান শিক্ষক আব্দুর হাই মাসুদ রানা বলেন, ‘‘পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় স্কুল বন্ধ রাখি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। আশা করি, দু’এক দিনের মধ্যে পরীক্ষা শুরু হবে।’’
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ধারে ফল বিক্রিও শুরু হয়েছে। তবে ফল, আলুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছিল অভিযোগ ওঠে। শমসেরগঞ্জের এক পুলিশকর্তা গিয়ে সে দাম স্বাভাবিক করতে বলে আসেন। রাস্তায় কম হলেও টোটোর দেখা মিলেছে। দুপুরে সামান্য কিছু খাবার হোটেল খোলে। হোটেল ব্যবসায়ী রাকেশ সাহা বলেন, ‘‘এখানে অনেকে রয়েছেন, যাঁরা বাইরে থেকে চাকরি করতে এসেছেন। তাঁরা হোটেলেই খান। সে কথা ভেবেই দোকান খুলেছি।’’ ধুলিয়ান থানাপাড়া কালীমন্দিরের পক্ষ থেকে গরিবদের যে এক টাকার বিনিময়ে খাবার দেওয়া হয়, তা এ দিন খোলা ছিল। মন্দিরের ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য রামকৃষ্ণ সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের খাবারের উপরে অনেক মানুষ নির্ভর করেন। এখানে কোনও ধর্ম, জাতির ভেদাভেদ নেই। সকলেই খাবার নেন। তাঁদের কথা ভেবেই আমরা খাবার দেওয়া স্বাভাবিক রেখেছি।’’
তবে অধিকাংশ দোকানই বন্ধ ছিল। রেডিমেড জামাকাপড়ের ব্যবসায়ী অলোক জৈন বলেন, ‘‘হঠাৎ কী কারণে যে এমন কাণ্ড হল,জানি না!’’