অফিস চেয়ার বাট সিনড্রোম কী, কমবেশি সকলেই ভুগছেন এই সমস্যায়। ছবি: ফ্রিপিক।
অফিসের চেয়ারে এক বার বসার পরে আর উঠতে মন চায় না। চেয়ারখানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে কাজের টার্গেট পূরণ হয় ঠিকই, কিন্তু শরীরের পেশিগুলি অচল ও অকেজো হতে শুরু করে। পিঠ-কোমরের যন্ত্রণায় ভুগছেন না, এমন লোকজনের সংখ্যা কম। বেশির ভাগই বলবেন, তাঁরা অফিসে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা বসে কাজ করেন। যাঁরা নিয়ম করে শরীরচর্চাটুকু করেন, তাঁদের সমস্যা খানিক কম হলেও, কোমর ও নিতম্বের পেশির অসাড়তা থেকে রেহাই নেই। এই যে নিদারুণ ব্যথাবেদনা ভোগাচ্ছে, তার একটা গালভরা নাম আছে। একে বলা হয় ‘অফিস চেয়ার বাট সিনড্রোম’।
কোনও জটিল রোগ নয়। দীর্ঘ ক্ষণ বসে থেকে নিতম্বের পেশি অসাড় হতো হচ্ছেই, তার আকারও নাকি বদলে যাচ্ছে। আর মেদ জমছে কোমর ও নিতম্বের পেশিতে। এই সমস্যার নামই ‘অফিস চেয়ার বাট সিনড্রোম’। সমস্যা দু’ভাবে হতে পারে— ১) কী ধরনের চেয়ারে বসছেন ও কী ভঙ্গিতে সারা দিন বসছেন ২) একটানা কত ক্ষণ বসে থাকছেন।
আমেরিকার ‘জার্নাল অফ লাইফস্টাইল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, 'অফিস চেয়ার বাট' নামক সমস্যাটি কেবল এক জন বা দু’জনের নয়। বিশ্বব্যাপী এই সমস্যার শিকার হচ্ছেন কমবয়সিরাই। দেখা গিয়েছে, টানা ঘণ্টা দুয়েকও যদি কেউ ঠায় চেয়ারে বসে কাজ করেন এবং সামনের দিকে ঝুঁকে থাকেন, তা হলে তাঁর এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন অস্থিরোগ চিকিৎসক সুব্রত গড়াই। তাঁর কথায়, “চেয়ারে ঘণ্টাখানেক বসে যখন উঠে দাঁড়ান, তখন দেখবেন নিতম্বের পেশিতে ব্যথা হচ্ছে অথবা মনে হবে পেশি অসাড় হয়ে গিয়েছে। যাঁরা টানা ঘণ্টাখানেক বসে থাকেন, তাঁদের নিতম্বের গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস পেশির আকারও বদলে যায়। ফলে নিতম্বের গড়নেও বদল আসে। সেই সঙ্গে স্থূল হতে থাকে কোমর।”
নিতম্বের সবচেয়ে বড় পেশি হল গ্লুটিয়াস। তার গঠনবিন্যাস যদি বদলে যায়, তা হলে নানা সমস্যা দেখা দেবে। যেমন, মেরুদণ্ড ও নিতম্বের সংযোগস্থলে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, গ্লুটিয়াস পেশিই নিতম্ব ও পেলভিস অংশকে সোজা রেখে হাঁটাচলা করতে সাহায্য করে। ওই পেশির গঠনবিন্যাসই যদি বদলে যায়, তা হলে সোজা হয়ে দীর্ঘ সময়ে বসে থাকা বা মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাঁটতে সমস্যা হবে। তখন হাঁটতে গেলেই শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে যাবে। বেশি ক্ষণ বসলে কোমর ও পায়ের শিরায় টান ধরবে, যন্ত্রণাও শুরু হবে।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, একটানা বসে থেকে ওঠার পরে অনেকেরই হাঁটতে কষ্ট হয়। মনে হয়, পায়ের পেশিও অসাড় হয়ে গিয়েছে। পা ফুলে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়। এই সবই হয় অফিস চেয়ার বাট সিনড্রোমের জন্যই।
কী করণীয়?
১) অফিসে বসে কাজ করতেই হবে। তাই বিরতি নিয়ে কাজ করা উচিত। চিকিৎসক পরামর্শ দিলেন, টানা ৩০ মিনিটের বেশি বসবেন না। ভাল হয়, প্রতি ২০-৩০ মিনিট অন্তর উঠে ৫ মিনিট হেঁটে আসুন।
২) অফিস বলে নয়, বাড়িতে বসেও যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা দীর্ঘ সময়ে চেয়ার, সোফা বা বিছানায় কোলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকেন। এই অভ্যাসও ক্ষতিকর। এর থেকেও পরবর্তী সময়ে পেশির ব্যথা, পেশিতে টান ধরা বা খিঁচুনি হতে পারে।
৩) নিতম্ব ও কোমরের পেশি কার্যক্ষম রাখতে কিছু ব্যায়াম করতেই হবে। বিশেষ করে যাঁদের বসে কাজ করতে হয়, তাঁরা স্কোয়াট, গ্লুট ব্রিজ, লাঞ্জেসের মতো স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে ভাল। হাঁটুর সমস্যা না থাকলে নিয়মিত স্টেপ-আপসও করতে পারেন।
৪) হিপ সার্কল আসনটি খুবই কার্যকরী। যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ ডেস্কে বসে কাজ করেন তাঁদের জন্যেও হিপ সার্কল অত্যন্ত উপযোগী আসন। শিরদাঁড়া সোজা রেখে চেয়ারে বসে প্রথমে ডান পা সোজা করে নিতম্ব থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে ধীরে ধীরে ঘোরাতে হবে ৫-৭ বার, তার পর ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘোরাতে হবে একই ভাবে। দুই পায়ে এমন করে আসনটি করতে হবে ২ থেকে ৩ সেট।