TMC Congress

কংগ্রেস সম্পর্কে মমতার বক্তব্য ‘হাতিয়ার’ করেই বামেদের সঙ্গে জোট-কথা এগোতে চায় বঙ্গ কংগ্রেস

প্রদেশ কংগ্রেসের অনেক পোড়খাওয়া নেতা এমনও বলছেন যে, মমতা ঘরোয়া বৈঠকে কী বললেন, তার ভিত্তিতে হাইকমান্ড যে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়ার মনোভাব ছেড়ে দেবে, তা না-ও হতে পারে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৮
PCC leadership wants to inform high command about Mamata Banerjee\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s statement about Congress.

(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী, সনিয়া গান্ধী, অধীর চৌধুরী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শুক্রবার মুর্শিদাবাদের জেলা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেস সম্পর্কে ‘কড়া মনোভাব’ দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা পার্টিকে মমতা জানিয়েছেন, অধীর চৌধুরী কোনও ‘ফ্যাক্টর’ নন। ওঁকে উপেক্ষা করেই ভোটের দিকে তাকাতে হবে। প্রদেশ কংগ্রেস সম্পর্কে মমতার এই মনোভাবকেই এ বার ‘হাতিয়ার’ করতে চাইছে বিধান ভবন। প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কংগ্রেস হাইকমান্ডকে জানানোর যে, বাংলায় কংগ্রেস সম্পর্কে মমতা কী ‘মনোভাব’ পোষণ করেন। প্রদেশ নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, এই সুযোগেই এ বার লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে বামেদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা উচিত। তবে সবটাই নির্ভর করছে হাইকমান্ডের সবুজ সঙ্কেতের উপর।

Advertisement

সূত্রের খবর, প্রদেশ কংগ্রেসের কয়েক জন নেতা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মমতার কংগ্রেস এবং অধীর সম্পর্কে বক্তব্য হাইকমান্ডকে জানাচ্ছেন। সম্প্রতি এআইসিসি-র তরফে বাংলার পর্যবেক্ষক জিএ মির প্রদেশ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন। তাঁর সামনেই বাংলার নেতারা বলেছিলেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে তা হবে কংগ্রেসের জন্য ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত। কিন্তু তার পরেও হাইকমান্ড থেকে কোনও স্পষ্ট বার্তা আসেনি। এই প্রেক্ষাপটে দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে মমতা শুক্রবার ঠারেঠোরে একলা চলার বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। সূত্রের খবর, তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, ৪২টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থী দেবে। সেই প্রস্তুতি রাখতে হবে। যদিও অনেকেই মনে করছেন, মমতা আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে আগে থেকে খানিকটা বাড়তি ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইছেন কংগ্রেসের উপর। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে যাতে কংগ্রেসকে বেশি আসন ছাড়তে না হয়, সেই আবহই তৈরি করতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী। তবে এ-ও ঠিক যে, ২০১১ সালের পর থেকে মমতা একলা চলেই যাবতীয় সাফল্য পয়েছেন।

শনিবার প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘‘শুনলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, অধীর চৌধুরী কোনও ফ্যাক্টর নন। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি, উনি (মমতা) গিয়ে বহরমপুরে ভোটে দাঁড়ান!’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘বাংলার মাটিতে আমাদের লড়াই বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়ের বিরুদ্ধেই। আর উনি যে বিজেপিকে পরোক্ষে সাহায্য করতে চান, তা আমরা আগেও বলেছি।’’ দলের বৈঠকে কংগ্রেস সম্পর্কে মমতার চড়া সুর কি বামেদের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করার রাস্তা খুলে দিল? হাইকমান্ডকে বোঝানোর ক্ষেত্রেও একটা পোক্ত উদাহরণ পাওয়া গেল? সৌম্যর জবাব, ‘‘আমরা বামেদের সঙ্গে জোট ভাঙিনি। প্রকাশ্যে, ঘোষণা করে জোট করেছি। দিনের আলোয় জোট করেছি। তবে আগামী দিনের রাজনীতিতে কী হবে তা ভবিষ্যৎই বলবে।’’

গত ডিসেম্বর থেকেই কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে কালীঘাটের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলছিলেন। যে কারণে মাঝে কিছু দিন অধীরের মতো নেতাও প্রকাশ্যে তৃণমূল সম্পর্কে ততটা ঝাঁঝালো কিছু বলছিলেন না। কিন্তু আসন নিয়ে দর কষাকষির মধ্যেই তা কিছুটা অন্য দিকে বাঁক নেয়। অধীরও ফিরে যান পুরনো মেজাজে। উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের পরের দিনই বাংলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধী, কেসি বেণুগোপাল। সেখানে বাংলার নেতাদের থেকে তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরের এক মাসে নানাবিধ ঘটনার পর দেখা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া’র ভার্চুয়াল বৈঠকে তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি যোগ দেননি।

বস্তুত, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাজ্য সিপিএম উদ্যোগ নিয়েছিল সব বাম দলের পাশাপাশি কংগ্রেসের সঙ্গেও আলোচনা করার। কিন্তু বিধান ভবনের হাত-পা সেই সময়ে কার্যত বাঁধা ছিল হাইকমান্ডের কাছে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘ইচ্ছে থাকলেও তখন আমাদের উপায় ছিল না।’’

তবে প্রদেশ কংগ্রেসের অনেক পোড়খাওয়া নেতা এমনও বলছেন যে, মমতা ঘরোয়া বৈঠকে কী বললেন, তার ভিত্তিতে হাইকমান্ড যে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়ার মনোভাব ছেড়ে দেবে, এমন না-ও হতে পারে। ফলে প্রদেশ কংগ্রেসের মধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোটবিরোধী অংশের অনেকেই চাইছেন, হাইকমান্ডকে বোঝানোর মতো ‘রসদ’ জোগাতে। পাশাপাশিই, রাহুল গান্ধী তাঁর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ নিয়ে বাংলায় প্রবেশ করার পরে তৃণমূল সম্পর্কে কিছু বলেন কি না, সে দিকেও নজর রাখছে প্রদেশ কংগ্রেস। আবার কারও কারও এ-ও বক্তব্য যে, রাহুলের পক্ষে বাংলায় দাঁড়িয়ে সরাসরি তৃণমূলের সমালোচনা করার সুযোগ কম। তাতে সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্য নষ্ট হতে পারে। অর্থাৎ, বিধান ভবনকে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকতে হবে হাইকমান্ডের দিকে। একই ভাবে বঙ্গের বামেদেরও আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

আরও পড়ুন
Advertisement