আলিপুরের বিশেষ আদালতের বাইরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
দলের তরফে ‘দূরত্ব’ বজায় রাখা হলেও তৃণমূলের কাছাকাছিই থাকতে চাইছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়! বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ঢোকার মুখে দলীয় কর্মীদের বড়দিনের এবং নতুন বছরের শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে আরও এক বার স্পষ্ট করলেন তিনি। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত পার্থ বর্তমানে জেল হেফাজতে। বৃহস্পতিবার পার্থ-সহ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত ৭ জনকে আলিপুরের বিশেষ আদালতে পেশ করার কথা। সেই মতোই বেলা ১১টা নাগাদ পার্থকে আলিপুরের আদালতে নিয়ে আসা হয়। আদালতের বাইরে পুলিশের গাড়ি থেকে নামতেই তাঁর মুখে এক গাল হাসি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পার্থ বলেন, ‘‘আমি সবার আগে ২০২৩-এর শুভ নববর্ষের এবং তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে তৃণমূলের সব কর্মীকে আগাম শুভেচ্ছা জানাই। সকলকে ইংরেজি নতুন বর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। বেহালা আমার এলাকা। সেই বেহালাবাসীদেরও অভিনন্দন জানাই। এবং বহু প্রতীক্ষিত জোকা থেকে তারাতলা মেট্রো রেল চালু হোক। আমাদের বহু দিনের শখ। তা যেন পূর্ণতা পায়।’’
১২ ডিসেম্বর আদালতে ঢোকার আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর করা ‘ডিসেম্বর ডেডলাইন’ মন্তব্য উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলের কেউ কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। কেউ পারবে না।’’ এর পর বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মুখে দলীয় কর্মীদের শুভেচ্ছাবার্তা দিতে শোনা গেল। যদিও নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে নাম জড়ানোর পর এবং ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই তাঁর থেকে দূরত্বই বজায় রেখেছে তৃণমূলের উপরের তলার নেতারা। আগ বাড়িয়ে কোনও নেতা এ-ও বলেননি যে পার্থ নির্দোষ। বরং বিচারব্যবস্থার উপরই বার বার আস্থা রাখতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। ‘দুর্নীতি’তে নাম জড়ানোর পর পার্থকে মন্ত্রী এবং সমস্ত দলীয় পদ থেকে অপসারণও করা হয়। কিন্তু জেলে ঢোকার পর থেকে পার্থ বার বার জানিয়েছেন তিনি দলের প্রতি অনুগত। তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাঁর সম্পর্কে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা তিনি মেনে নেবেন।
পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বেহালাবাসীরও মন জিততে চাইলেন পার্থ। তিনি জেলে যাওয়ার পর ওই এলাকাতেই তাঁর নামে অনেক পোস্টার পড়েছে। এলাকার মানুষদেরও প্রকাশ্যে ক্ষোভপ্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। এ বার সেই বেহালাবাসীদেরই হিতে কথা বলতে এবং অভিনন্দন জানাতে দেখা গেল পার্থকে। কিন্তু গ্রেফতারির এত দিন পর হঠাৎ করে কেন বেহালাবাসীর কথা মনে পড়ল পার্থের? আগের দিন আদালতে ইডি-কর্তাদের এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। তা হলে কি তিনি বুঝতে পারছেন যে, সঠিক প্রমাণ না দিতে পারলে বেশি দিন তাঁকে আর জেলে আটকে রাখা যাবে না? আর তাই জেলের বাইরে বেরোনোর আগেই আবার এলাকাবাসীর মন জয় করতে চাইছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী? উঠছে প্রশ্ন।