West Bengal Panchayat Election 2023

গত পঞ্চায়েত ভোটে বিনা বাধায় জয় এসেছিল, এ বার মুখ্যমন্ত্রীর মামাবাড়িতে টক্কর বিরোধীদের

রামপুরহাটের কুসুম্বা গ্রামের অনতিদূরে চাকাইপুর গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক ভিটে। কুসুম্বা গ্রামের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের বিষয়টি মমতা বীরভূমে একাধিক বার বৈঠকে এবং বিভিন্ন সময় বলেছেন।

Advertisement
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
কুসুম্বা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩ ০৮:২৬
Mamata Banerjee

বিরোধীদের জোর টক্কর মুখ্যমন্ত্রীর মামার বাড়ি এলাকায়। — ফাইল চিত্র।

গত পঞ্চায়েত ভোটে বিনা লড়াইয়ে জয় এসেছিল। কিন্তু তারপরে লোকসভা ও বিধানসভা— পরপর দু’টি নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাবাড়ির কুসুম্বা পঞ্চায়েতে জিততে পারেনি তৃণমূল। এ বারে আর বিনা লড়াইয়ে জেতার সুযোগ হয়নি শাসক দলের। বিরোধীরাও এ বার কুসুম্বা গ্রামের ‘মর্যাদার লড়াইয়ে’ জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।

রামপুরহাটের কুসুম্বা গ্রামে তৃণমূলনেত্রী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাবাড়ি। কুসুম্বার অনতিদূরে চাকাইপুর গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক ভিটে। কুসুম্বা গ্রামের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের বিষয়টি খোদ মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমে একাধিকবার প্রশাসনিক বৈঠকে এবং বিভিন্ন সময় বলেছেন।

Advertisement

মাসখানেক আগে জেলায় নবজোয়ার কর্মসূচিতে এসে তারাপীঠে রাত্রিবাস করার আগে কুসুম্বা গ্রামে দাদুর সঙ্গে দেখা করে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অভিষেকও গ্রামের রাস্তাঘাট, গ্রামের হাইস্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নতিকরণ-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচির প্রশংসা করেন। এই কুসুম্বা গ্রামেই গত দুটি ভোটে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তৃণমূলকে।

গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের পাঁচ বারের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হলেও কুসুম্বা পঞ্চায়েত এলাকায় ২ হাজার ১৭৮ ভোটে বিজেপির কাছে তৃণমূল হেরেছে। কুসুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯টি বুথের মধ্যে ১৩টি বুথে বিজেপির কাছে তৃণমূল হেরেছে। তার মধ্যে খোদ কুসুম্বা গ্রামের তিনটি বুথ যেমন রয়েছে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক ভিটে চাকাইপুর গ্রামও আছে। লোকসভা নির্বাচনেও শতাব্দী রায় জয়ী হলেও কুসুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির কাছে তিন হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল হেরেছে।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। এ বারে পঞ্চায়েত সমিতির ৫ নম্বর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাতো ভাই নীহার মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী পম্পা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধ্বিতায় কুসুম্বা থেকেই জেলা পরিষদে নির্বাচিত হয়ে নীহার বীরভূম জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ হন। পম্পা রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন। এ বারে নীহার সংরক্ষণের জন্য প্রার্থী হতে পারেননি।

তৃণমূল সূত্রে দাবি, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে কুসুম্বা পঞ্চায়েতে বিজেপির কাছে দল পিছিয়ে থাকায় দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দলের প্রাক্তন রামপুরহাট ১ ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে দায়িত্ব থেকে সরাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তবে সূত্রের দাবি, দলের দীর্ঘদিনের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ায় আনারুলকে দায়িত্বে রেখে দেন অনুব্রত।

বগটুই-কাণ্ডে আনারুল গ্রেফতার হওয়ার পরে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, আনারুলের গ্রেফতার নিয়ে ক্ষুব্ধ তাঁর অনুগামীরা অনেকেই ঘরে বসে গিয়েছেন। এতদিন যে সমস্ত সিপিএম কর্মীরা কোণঠাসা ছিলেন তাঁরা এখন প্রকাশ্যে সিপিএম করছেন।

আবার কুসুম্বা অঞ্চলে বরাবরই বিজেপির সংগঠন ভাল থাকায় লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনের হার পুনরুদ্ধার করে পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে আনা খুব মুশকিল বলে অনেক তৃণমূল কর্মীই মনে করছেন। পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসনের মধ্যে দুটি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বলে তৃণমূল কর্মীদের অনেকের দাবি।

বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘কুসুম্বা পঞ্চায়েতে আমাদের সংগঠন ভাল। এ বারে আমরা ওই পঞ্চায়েত দখল করব।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতি দেখে মানুষ এখন ঘৃণায় তৃণমূল বিজেপি কী সেটা বুঝে নিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওদেরকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য মানুষ প্রস্তুত।’’

দলের জেলা চেয়ারম্যান, রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৫টি প্রকল্প এলাকার প্রত্যেকে কোনও না কোনও ভাবে পেয়েছেন। আমরা মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন মূলক কাজের খতিয়ান তুলে ধরে যাব। এর পরে মানুষ যা ভালো বুঝবেন সেটা করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement