West Bengal By Election

পদ্মের ‘দুর্গ’ ভেঙে পতাকা ঘাসফুলের

মাদারিহাটের ভোটে তৃণমূলের ‘সেনাধ্যক্ষ’ ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য তথা দলের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক। ভোটের আগে প্রকাশ-সহ দলের অন্য জেলা নেতারা মাদারিহাটেই ঘাঁটি করেন।

Advertisement
পার্থ চক্রবর্তী, সুমন দাস
মাদারিহাট শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৮
মাদারিহাট বিধানসভার একদম শেষ সীমানা সাঁকোয়া ঝোরাতে ডিজে বাজিয়ে বাজি ফাটিয়ে বিজয় উল্লাস তৃণমূলের।

মাদারিহাট বিধানসভার একদম শেষ সীমানা সাঁকোয়া ঝোরাতে ডিজে বাজিয়ে বাজি ফাটিয়ে বিজয় উল্লাস তৃণমূলের। ছবি দীপঙ্কর ঘটক।

বিজেপির ‘দুর্গ’ ভাঙল তৃণমূল। উপনির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের হাত মাদারিহাট ছিনিয়ে কার্যত ইতিহাস গড়ল শাসক দল। ২৮ হাজারের বেশি ভোটে বিজেপির রাহুল লোহারকে পরাজিত করলেন শাসক দলের প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। ভোটের দিন ছাপ্পা ও বুথ দখলের অভিযোগ তুললেও, চা বাগানে তৃণমূল সরকারের উন্নয়নই হারের অন্যতম কারণ বলে ফলপ্রকাশের পরে মেনে নিলেন রাহুল। মাদারিহাট আসন হাতছাড়া হওয়ার পরে বিজেপির অন্দরে ফের প্রকট হল ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’। হারের জন্য আলিপুরদুয়ারের সাংসদ তথা জেলা বিজেপি সভাপতি মনোজ টিগ্গাকে নিশানা করলেন জন বার্লা। নিশানা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও।

Advertisement

মাদারিহাটের ভোটে তৃণমূলের ‘সেনাধ্যক্ষ’ ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য তথা দলের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক। ভোটের আগে প্রকাশ-সহ দলের অন্য জেলা নেতারা মাদারিহাটেই ঘাঁটি করেন। সাজানো হয় রণকৌশল। তাতেই শেষ পর্যন্ত মিলল জয়।

আলিপুরদুয়ারে মাদারিহাটই একমাত্র আসন ছিল, যেখানে তৃণমূল আগে কখনও বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়নি। তৃণমূলের রাজত্বে গত দু’টি বিধানসভা নির্বাচনে ওই আসনে জয়ী হন টিগ্গাই। গত লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে টিগ্গা সাংসদ হওয়ায় মাদারিহাটে উপনির্বাচন হয়। প্রয়াত প্রাক্তন সিটু নেতা তারকেশ্বর লোহারের ছেলে রাহুলকে ওই আসনে প্রার্থী করে বিজেপি। তবে দলের অন্দরের খবর, নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের ‘সেনাপতি’ ছিলেন টিগ্গাই।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক বিধায়ক বলেন, “চা বলয় প্রধান মাদারিহাটের বাগান শ্রমিকেরা উপনির্বাচনে আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এর কারণ খুঁজে বার করা জরুরি।” আলিপুরদুয়ার বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, কিছু দিন আগে পর্যন্ত জন বার্লা ‘ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’ বা বিটিডব্লিউইউ-এর সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন। সম্প্রতি তার দায়িত্ব পান টিগ্গা। বার্লা বা তাঁর ঘনিষ্ঠ চা বলয়ের নেতাদের উপনির্বাচনের আগে প্রচারে নামতেও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।

তারই প্রভাব কি পড়ল উপনির্বাচনের ফলে? এ দিন ভোটের ফলপ্রকাশের পরে টিগ্গাকে আক্রমণ করে নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বার্লা বলেন, “দলের এই পতনের কারণ ওঁর (মনোজ টিগ্গা) অহঙ্কার। ওয়ান ম্যান আর্মি একা একা সব সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই ফল হয়েছে। আজ যদি উনি সবার মতামত নিয়ে কাজ করতেন এবং নির্বাচনে আমাকেও যুক্ত করতেন, তা হলে এই ফল হত না।’’ বার্লা আরও বলেন, ‘‘মাদারিহাটে আমারও ছেলেরা রয়েছে। কিন্তু উনি ঠিক করে নিয়েছিলেন, মাদারিহাট উপনির্বাচনে আমায় থাকতে দেবেন না।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মনোজ টিগ্গা কত দিন চা শ্রমিকদের হয়ে আন্দোলন করেছেন? কেন তিনি শ্রমিকদের ১৬ শতাংশ পুজো বোনাসের চুক্তিতে সই করলেন? সে জন্যই চা শ্রমিকেরা বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।’’ রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকেও নিশানা করে বার্লা বলেন, “উনি সব বিধায়কদের হাতে রাখতে চান। সে জন্যই এখানে আজ বিজেপির সংগঠনের এই অবস্থা।”

যদিও টিগ্গা বলেন, ‘‘কে, কী বললেন, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। মাদারিহাটের মানুষ সব সময় আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। এ বারের নির্বাচনে হারের কারণ নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখব। তবে উপনির্বাচন ঘিরে অর্থবল থেকে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসনকে তৃণমূল যে ভাবে কাজে লাগিয়েছে, তা আগে দেখা যায়নি।”

মাদারিহাটের বিজেপি প্রার্থী রাহুল উপনির্বাচনে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুললেও বলেন, “চা বলয়ের উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাগানে শ্রমিকদের ঘর তৈরির প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ ভোটের ফলে প্রভাব ফেলেছে।” জন বার্লা এবং মনোজ টিগ্গার ঝামেলাতেই কি মাদারিহাট আসন হারাতে হল? বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘বিজেপি নীতি-নির্ভর দল, নেতা-নির্ভর নয়।’’

মাদারিহাটে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ বলেন, “গত আট বছরে বিজেপি এলাকায় কোনও কাজ করেনি। তৃণমূল এই আসনে বার বার পরাজিত হয়েও চা শ্রমিক-সহ সকলের উন্নয়ন করেছে। সে জন্যই এই আসনে মাদারিহাটের মানুষ আমাদের জয়ী করেছেন।” প্রকাশ বলেন, “আমাদের আশা ছিল, মাদারিহাটে এ বার আমরা ইতিহাস গড়ব। সেটা হয়েছে। এ বার নির্বাচনী ইস্তাহার অনুযায়ী, এলাকায় কাজ করা হবে।”

আরও পড়ুন
Advertisement