কী ভাবে বিপর্যয়, অভিজ্ঞতা জানালেন রাম ও বিনু। —নিজস্ব চিত্র।
ডুয়ার্সের মালবাজার শহর ছাড়াও চা বাগান এলাকার একাধিক পুজো উদ্যোক্তা— সব মিলিয়ে প্রায় ছয় থেকে আট হাজার মানুষ মাল নদীর বিসর্জন ঘাটে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের মাঝে থাকা তেশিমলা গ্রামের যুবক মহম্মদ মানিক হড়পা বানে ভেসে যাওয়া ১০ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। ওই ভিড়ে ছিলেন রাম মানকি মুণ্ডা, বিনু গঞ্জুও। এই দুই বন্ধু না থাকলে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। দু’জন মিলে ‘পাগলা বান’ থেকে উদ্ধার করেন একের পর এক ব্যক্তিকে। তাঁদের দাবি, পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য সময় মতো পেলে আরও কয়েক জনকে প্রাণে বাঁচাতে পারতেন। এ ভাবে চোখের সামনে ভেসে যেতে দিতেন না।
মালবাজারের একটি চা বাগানের বাসিন্দা রাম এবং বিনু। মাল পুরনিগমের হয়ে প্রতিমা বিসর্জনের কাজে সাহায্য করছিলেন দু’জন। মাল নদীতে হঠাৎ জল বাড়তে দেখেন রাম। তখনই প্রশাসনকে সজাগ করেন দুই বন্ধু। তাঁদের দাবি, ওই সময় প্রশাসনের তরফে রীতিমতো মাইকিং শুরু হয়। বার বার সবাইকে নদী থেকে উঠে আসার আবেদন করা হচ্ছিল। কিন্তু কেউ কান দেননি। তার কিছু ক্ষণ পরেই এই দুর্ঘটনা।
রামের কথায়, ‘‘আমরা চা বাগানের মানুষ, এই নদী সম্পর্কে জানি। এই নদীকে কেন্দ্র করেই আমাদের জীবনযাপন। নদীতে জল যখনই বাড়তে থাকে তখনই সন্দেহ হয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় এই নদীতে হড়পা বান দেখেছি।’’ দশমীর ঘটনা নিয়ে রামের সংযুক্তি, ‘‘জল বাড়তে দেখে স্যরদের জানাই। ওঁরা মাইকে বলেনও সে কথা। কিন্তু কেউই জল থেকে উঠছিলেন না। নদী থেকে উঠে আসার যথেষ্ট সময় হাতে ছিল। কেউ বারণ শোনেননি। হঠাৎ প্রচুর জল বেড়ে যায়। হুড়মুড়িয়ে এক এক জন করে ভেসে যাচ্ছিলেন। সেই দৃশ্য দেখে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। পুলিশ বাধা দিয়েছিল। কিন্তু আমি ঝাঁপ দিই নদীতে। ছোটবেলা থেকে এই নদীকে দেখছি। বহু বার হড়পা বান দেখেছি এখানে। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উদ্ধার করতে নেমে পড়ি।’’
রামকে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি ছোটবেলার বন্ধু বিনু। দু’জনে মিলে কমপক্ষে ৪০ জনকে বাঁচান। বিনু বলেন, ‘‘বিসর্জনের জায়গা থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে একটি জঙ্গলের কাছে জল থেকে ওঁদের টেনে তুলি।’’ বিনুর আক্ষেপ আট জনকে তিনি বাঁচাতে পারেননি। বলেন, ‘‘সে সময় যদি পুলিশ বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সাহায্য করত, তা হলে বাকিদেরও বাঁচানো সম্ভব হত। কিন্তু ওরা রাত ১০টার পর কাজে নামল। তত ক্ষণে আমাদের মতো আরও অনেকে বহু মানুষকে হড়পা বান থেকে টেনে তুলেছেন। অনেকে ভেসে গিয়েছেন।’’