মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনীত থাপা —ফাইল চিত্র।
পাহাড়ে আসন্ন সব ভোটে নিজেদের প্রতীকে লড়বে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। তৃণমূল তাদের সহযোগী বা সঙ্গী হিসাবে কাজ করে যাবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, গত তিন দিনে পাহাড়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপার একাধিক বার কথা হয়েছে। তাঁরা গোপাল লামা, অমর সিংহ রাইদের মতো প্রবীণ নেতাদের সঙ্গেও ইতিমধ্যে মত বিনিময় করেছেন।
জানা গিয়েছে, তাতে এক প্রকার ঠিক হয়েছে, আগামী বছর তিনটি পুরসভা, ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতৃত্বে পাহাড়ে দুই দল ভোটে লড়়বে। তৃণমূলের প্রতীক, ঘাসফুল নিয়ে পাহাড়বাসীর একটা বড় অংশের মধ্যে ‘ছুঁতমার্গ’ থাকায় জোটধর্ম মেনে কাজ করবে তৃণমূল। আগামীতে দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের ভোট-রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘নতুন ভূমিকা’ নিয়ে দলের অন্দরে-বাইরে আলোচনা শুরু হয়েছে।
তৃণমূলের তরফে তো বটেই, প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার তরফেও সরকারি ভাবে এ নিয়ে কেউ কিছু বলতে চাননি। তবে মোর্চার এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘দুই দল পাহাড়ে জোটধর্ম পালন করবে বলে ঠিক হয়েছে। মোমবাতি প্রতীকে জেতা জনপ্রতিনিধিরা সর্বত্র তৃণমূলের সমর্থনেই থাকবেন। এর বিকল্প হবে না।’’
গত দুবছরে দ্বিস্তরীয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ), একটি বিধানসভা আসন থেকে চারটি পুরসভার ক্ষমতা—সব কিছুর পরেও দার্জিলিং লোকসভায় জিততে পারেনি প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা এবং তাদের সহযোগী রাজ্যের শাসক তৃণমূল। গত জুনে ফল বেরনোর পরেই অনীত থাপার নেতৃত্বে দলের পর্যালোচনা বৈঠক হয়। তাতে অনেকগুলি কারণের মধ্যে পাহাড়বাসীদের একটা বড় অংশ তৃণমূলের প্রতীকে ভোট দেননি, বলে উঠে আসে। অথচ, কোনও নির্বাচনে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা মোমবাতি প্রতীক নিয়ে লড়লে, সে এলাকায় তাদের জয় নিশ্চিত হয়েছে।
লোকসভা ভোটে বিজেপির রাজু বিস্তা তৃণমূলের গোপাল লামার থেকে পাহাড়ে ৯৩ হাজারের বেশি পেয়েছেন। গত লোকসভায় তুলনায় বিজেপি-তৃণমূলের ব্যবধান অনেকটা কমলেও, ফলাফলে তৃণমূল প্রার্থী বা প্রতীক একটি কারণ হয়েছে বলে ফলপ্রকাশের পরে দুদলের কাটাছেঁড়ায় উঠে এসেছে। প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার অন্দরের খবর, তৃণমূলের প্রতীক নিয়ে তাদের দলের জনপ্রতিনিধিরা পাহাড়ের গ্রামে বা শহরে পুরোপুরি সক্রিয় হননি। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, ঘাসফুল প্রতীক নিয়ে বেশি সক্রিয় হলে তাঁদের নিজেদের ভোট-ব্যাঙ্কে সমস্যা হতে পারে।
আবার স্থানীয় দলের বাইরে পাহাড়বাসীর পছন্দ জাতীয় দল। স্থানীয়দের সমর্থনে কংগ্রেস, বিজেপি এ ভাবে দার্জিলিং লোকসভা আসনে একাধিক বার জিতেছে।
তৃণমূলের রাজ্য স্তরের এক নেতার কথায়, ‘‘এ বার জোট-ধর্মের আলোচনা করে ভোটের রাজনীতিতে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চাকেই পাহাড়ে সামনে রাখার সিদ্ধান্তে মোটামুটি শিলমোহর পড়ল।’’