Duare Sarkar Campaign

জাতি শংসাপত্র পেতে ভিড় বাড়ছে শিবিরে

শুক্রবার মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ি পঞ্চায়েতের উপনচৌকি উচ্চ বিদ্যালয়, ভোটবাড়ি সীতানাথ হাইস্কুল ও মেখলিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির বসে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গ শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩২

আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক সভায় আদিবাসীদের জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, পরিবারের কোনও এক সদস্যের শংসাপত্র থাকলেই তা দেখে নতুন আবেদনকারীকে জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া হবে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে তাই জাতি শংসাপত্রের আবেদন জমা দিতে লম্বা লাইন পড়ে
কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার দুই জেলাতেই।

Advertisement

প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কোচবিহার জেলায় এ দিন প্রায় দশ হাজার বাসিন্দা বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদন করেছেন। তার মধ্যে শংসাপত্র নিয়ে বহু আবেদন জমা পড়েছে। শুক্রবার কোচবিহারের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি জানান, ১৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোচবিহার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দুয়ারে সরকার শিবির হবে। নতুন বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন পত্র যাচাই করে পরিষেবা দেওয়া হবে। এ দিকে, আলিপুরদুয়ার জেলার কোহিনুর, কুমারগ্রাম, মাদারিহাট-সহ বিভিন্ন এলাকায় এ দিন দুয়ারে সরকারের শিবিরগুলিতে এ দিন শংসাপত্রের আবেদনের জন্য ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলা জুড়ে প্রায় ৪,৩৪০ জন আদিবাসী শংসাপত্রের জন্য শুক্রবার আবেদন করেন। তার মধ্যে কুমারগ্রাম ব্লকে ৭০০ জন, আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকে ৭৪০ জন, আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকে ৪৫০ জন, মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকে ৪৫০ জন, আলিপুরদুয়ার পুরসভায় ২৫০ জন, ফালাকাটা ব্লকে ১,১০০ জন, কালচিনি ব্লকের ৫৫০ জন আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা জানান, এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতোই কাজ হচ্ছে।

শুক্রবার মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ি পঞ্চায়েতের উপনচৌকি উচ্চ বিদ্যালয়, ভোটবাড়ি সীতানাথ হাইস্কুল ও মেখলিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির বসে। কুচলিবাড়ি এলাকায় তফসিলি উপজাতি প্রধান এলাকা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মলিন ওরাওঁ, সরলা ওরাওঁদের অভিযোগ, ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে বারবার আবেদন করেও উপজাতি শংসাপত্র মেলেনি তাঁদের। পঞ্চায়েত প্রধান নিরোলা ওরাওঁ নিজেও সেই অভিযোগ মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘উপজাতিভুক্ত হয়েও অনেকে আবেদন করে শংসাপত্র পাননি।’’ মেখলিগঞ্জের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অরিন্দম মন্ডলের কথায় , ‘‘আবেদন করলেই শংসাপত্র মিলবে এমন নয়। তার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। তালিকাভুক্ত হলেই শংসাপত্র দেওয়া হবে।’’ একই অভিযোগ তুলেছেন দিনহাটার জামারবস গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশও। স্থানীয় বাসিন্দা মণি টুডু বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকারে আবেদন করার পরেও অনেকে জাতি শংসাপত্র পাননি। এ বার ফের আবেদন করা হবে।’’

আলিপুরদুয়ারের কোহিনুর চা বাগানের এক শ্রমিক সীমা মুন্ডা অবশ্য বলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক সভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে আদিবাসী শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার কথা শুনেছিলাম। এ বার দুয়ারে সরকার শিবিরে তাই আবেদন জানালাম। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি জাতিগত শংসাপত্র হাতে পাব।’’ আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক আর বিমলাও বলেছেন, ‘‘যাঁরা আবেদন করছেন, তাঁরা শংসাপত্র পাবেন। রক্তের সম্পর্ক নেই এমনও অনেকে আবেদন করছেন। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে খোঁজখবর নিয়ে তাঁদেরও জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া হবে।’’

কোচবিহার জেলায় এ বার ৪,৬৮০টি দুয়ারে সরকার শিবির হবে। তার মধ্যে ২,৩৯৫টি বুথ স্তরের হবে। এর বাইরে প্রত্যন্ত এলাকায় সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য ২,২৮৫টি ভ্রাম্যমান শিবির হবে। জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করার কাজও হচ্ছে ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে। এখনও পর্যন্ত এক লক্ষ ১৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত বিষয় খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকলে, জাতি শংসাপত্র পেতে যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে, তা দেখা হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement