বন্যপ্রাণীদের হঠাৎ দর্শনে মানুষ স্বাভাবিক কারণেই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। —ফাইল চিত্র।
বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে বা কখনও ব্যতিক্রমী সময়েও বন্যপ্রাণীদের বন পেরিয়ে লোকালয়ে আসার ঘটনা চোখে পড়ে। বন্যপ্রাণী বন পেরিয়ে লোকালয়ে এলে স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের মুখোমুখি হয় এবং তা থেকে যে সংঘাতের শুরু। প্রাণী, মানুষ উভয়েই সমস্যার সম্মুখীন হয়। কখনও কখনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ভারতীয় গউরের মতো প্রাণী লোকালয়ে এসে, ভয়ে বা মানুষের অতি উৎসাহের আঘাতে প্রবল দৌড়ের পরে খুব স্বাভাবিক ভাবেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, যা পরবর্তী কালে প্রাণীটিকে প্রাণহানির দিকে ঠেলে দেয়।
বন্যপ্রাণীদের হঠাৎ দর্শনে মানুষ স্বাভাবিক কারণেই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তখন তাদের থেকে ভুল কিছু পদক্ষেপ হয়, যা ক্রমে ঘটনাকে দুর্ঘটনায় পরিণত করে। কখনও মানুষ অতি উৎসাহে হাতি বা অন্য প্রাণীদের এতটা কাছে চলে যায়, মুহূর্তে অঘটন ঘটে যায়। বনে গিয়ে ছবি বা ভিডিয়ো করতে গিয়ে অনেকেই বন্যপ্রাণের শিকার হয়ে যান।
এটা খুব সহজে বোঝা যায়, আমাদেরই আঁকা বনভূমির মানচিত্র আমরাই বার বার মুছে দিচ্ছি। সর্বত্রই বনের ঘনত্ব কমে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, বনভূমি কৃষিজমি হয়ে মানুষ বসবাসের জমিতে পরিণত হয়েছে। যে হারে শহর গিলে নিয়েছে মফস্সলকে, গ্রামকে। তেমনই শহরতলি বা বৃহত্তর শহরাঞ্চল গিলে নিয়েছে বনভূমিকেও। এই হাঁ আসলে সর্বগ্রাসী। নিজের গ্রাসের থাবায় মানুষ নিজেই যখন শিকার হতে বসেছে, বার বার দোষারোপ করেছে প্রতিপক্ষকে। এ ভাবেই আমাদের প্রতিবেশী কিংবা প্রতিবেশ আমাদের প্রতিপক্ষে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি, পর্যটনের নামে প্রকৃতির উপরে মানুষের অত্যাচার তো আছেই। বন সংলগ্ন অঞ্চলে শব্দদানবের দাপাদাপিতে বন্যপ্রাণের স্বাভাবিক জীবন বা মিলন মরসুম কম-বেশি প্রভাবিত। এ সবের পাশাপাশি, শীতের সময় যেহেতু ঘাস শুকিয়ে যায়, তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্য সঙ্কটও অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।
বন্যপ্রাণ কেন কৃষিজমি এলাকায় চলে আসছে, তা বোঝা মানুষের বোধগম্য হলেও প্রাণীদের তা না হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ মানুষের নিয়ন্ত্রণের রেখা সম্পর্কে কতটা অবগত, সে প্রশ্ন জাগে। এ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, সামান্য যে উপলব্ধি উঠে আসে তা হল, বন্যপ্রাণ ও মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে উভয়ের সুরক্ষায় কিছু পদক্ষেপ করা জরুরি। বন্যপ্রাণ নয়, মানুষ যদি নিজেদের ত্রুটি বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, তবেই বন্যপ্রাণ ও মানুষের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকবে।
(লেখক ও পরিবেশকর্মী, কোচবিহার)