‘প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট’ সমীক্ষার পরে, নতুন ‘করিডর’-এর ভাবনা
Passage of Elephant

চিহ্নিত এলাকায় বাধা, সঙ্কুচিত হাতি চলার পথ

২০১০ সালের সমীক্ষায় উত্তরের বনাঞ্চলে হাতি চলাচলের ১৫টি ‘করিডর’-কে চিহ্নিত করা হয়েছিল। চলতি বছরের সমীক্ষাতেও সেই ১৫টি ‘করিডর’-কেই ‘সক্রিয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement
অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:০১

উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলের চিহ্নিত ‘করিডর’-এও হাতিদের পদে পদে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের ‘প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট’ সমীক্ষার রিপোর্টে এই সব বাধার কথা উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, চিহ্নিত ‘করিডর’-এ কোথাও রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে মানুষের বসতি, কোথাও তৈরি হয়েছে চা বাগান। হাতিদের যাতায়াতের পথ ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সমীক্ষায়।

Advertisement

রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, "রিপোর্ট দেখেছি। আমeদের অনেক প্রস্তাবও রয়েছে। উত্তরবঙ্গে আমরা সাতটি করিডরকে প্রশস্ত করতে চা বাগানের জমিও নেব। প্রায় ২৭ কোটি টাকা দিয়ে নতুন করে করিডর তৈরি হবে।"

বৈকুণ্ঠপুরের তিস্তার শুকনো খাতে হাতি চলাচলের করিডরের মধ্যেই রয়েছে সেনাবাহিনীর চাঁদমারি বা গুলি ছোড়ার মহড়াকেন্দ্র। সমীক্ষার প্রস্তাব— দ্রুত ওই মহড়াকেন্দ্র হাতি চলাচলের ‘করি⌋ডর’ থেকে সরিয়ে নিতে হবে। মরাঘাট-সেন্টিরাল ডায়না, মরাঘাট রেতি— এই ‘করিডর’-এ বুনো হাতিদের যাতায়াতের জন্য ‘ওভারপাস’ বা ‘আন্ডারপাস’ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্টে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ির একাধিক বনাঞ্চল লাগোয়া ‘করিডর’ থেকে মানুষের বসতি, বনবস্তি সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। তবে এই প্রস্তাব কতটা রূপায়িত করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে বন দফতর। কারণ, বসতি সরাতে গেলে প্রবল বাধা আসবে এবং রাজনৈতিক চাপও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

এর আগে, ২০১০ সালের সমীক্ষায় উত্তরের বনাঞ্চলে হাতি চলাচলের ১৫টি ‘করিডর’-কে চিহ্নিত করা হয়েছিল। চলতি বছরের সমীক্ষাতেও সেই ১৫টি ‘করিডর’-কেই ‘সক্রিয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বক্সা-রিপু-সঙ্কোশ অথবা বক্সা তিতি ‘করিডর’ দিয়ে ৩০০টি হাতির চলাচলের তথ্যও সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়েছে। মূলত, গরুমারা, চাপড়ামারি, জলদাপাড়া, বক্সা, মহানন্দা এবং বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল থেকে জঙ্গলে বুনোর হাতির দল যাতায়াত করে। প্রতিটি ‘করিডর’ দিয়েই বুনো হাতির দল যাতায়াত করছে এবং প্রতি ক্ষেত্রেই বাধার মুখে পড়ছে বলে সমীক্ষার দাবি। যেমন— রেতি-সেন্ট্রাল ডায়না ‘করিডর’-এর উপরে চা বাগানের শ্রমিক কলোনি তৈরি হয়েছে। মহানন্দা-কলাবাড়ি ‘করিডর’-এ রেললাইন রয়েছে। সেটিও বুনো হাতি চলাচলের ক্ষেত্রে বিপত্তির। নিমতি-চিলাপাতা ‘করিডর’-এর উপরে আস্ত গ্রাম পত্তন হয়েছে। এই সব বাধার কারণেই বুনো হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে এবং সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। হাতি ‘করিডর’-এর সমীক্ষাদলে থাকা পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্য শ্যামাপ্রসাদ পাণ্ডে বলেন, ‘‘সমীক্ষা রিপোর্ট দেখেছি। হাতিদের নিরুপদ্রবে যাতায়াত করতে দিতে হবে। প্রায় সব করিডরেই বাধা তৈরি হয়েছে। দেখা যাক, এই সমীক্ষার পরে, কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

বাধা দূর করতে গুচ্ছ গুচ্ছ সুপারিশ করা হয়েছে। ট্রেনের ধাক্কায় ডুয়ার্সের জঙ্গলে হাতির মৃত্যু হয়েছে কিছু দিন আগে। হাতির হানায় পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। সেটিও ঘটেছিল হাতি চলাচলের ‘করিডর’-এই। আঁপালচাদ-গরুমারা এই ‘করিডর’-এর মধ্যে মানুষের বসতি তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ‘করিডর’গুলি প্রশস্ত করতে বলা হয়েছে। রাজ্যের বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি-সহ সবার সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করতে হবে। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। একা বন দফতরের পক্ষে সব করা সম্ভব নয়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement