National Investigation Agency

আল কায়দা? এনআইএ-র হানা বঙ্গেও

সোমবার ভোর থেকে কোচবিহারের হলদিবাড়ি এবং শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার ফুলবাড়ির দু’জায়গায় অভিযান চালায় এনআইএ। রাজ্য পুলিশের ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’ (এসটিএফ) সঙ্গে ছিল।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:৪০
এ বার উত্তরবঙ্গে এল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

এ বার উত্তরবঙ্গে এল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার হয়ে কাজ করা চার বাংলাদেশি এবং তাদের সহযোগীদের খোঁজে নেমে এ বার উত্তরবঙ্গে এল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। সোমবার ভোর থেকে কোচবিহারের হলদিবাড়ি এবং শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার ফুলবাড়ির দু’জায়গায় অভিযান চালায় এনআইএ। রাজ্য পুলিশের ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’ (এসটিএফ) সঙ্গে ছিল। কোচবিহারে এক সন্দেহভাজনের মা ও ফুলবাড়িতে এক সন্দেহভাজনকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হলেও, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নতুন করে নোটিস দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এনআইএ সূত্রের খবর, গত বছর মার্চ মাসে আল কায়দা জঙ্গি সন্দেহে গুজরাতের আমদাবাদ এসটিএফের হাতে চার বাংলাদেশি-সহ পাঁচ জন গ্রেফতার হন। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, বেশ কয়েকটি রাজ্যে সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মে নানা ভাবে ইন্ধন জোগাচ্ছে বাংলাদেশের কয়েক জন লোক। তাদের সঙ্গী হিসাবে কাজ করছে ভারতেরও কয়েক জন ব্যক্তি। সেই তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার ভোর থেকে জম্মু-কাশ্মীর, কর্নাটক, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং অসমের নানা জায়গায় অভিযান চালায় এনআইএ। পশ্চিমবঙ্গে তারা উত্তরবঙ্গ ছাড়াও হানা দেয় কলকাতার বেনিয়াপুকুরে।

এসটিএফের ডিএসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিক জানান, গত বছরের মে মাসে আমদাবাদ ‘এটিএস’ কেন্দ্রের কাছে বাংলাদেশ থেকে এ পারে এসে আল কায়দার হয়ে কাজ শুরু করা চার সন্দেহভাজন বাংলাদেশির নাম-পরিচয় পাঠায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে সে তদন্তভার এনআইএ পেয়েছে। তদন্তে নেমে, দলটির সহযোগী এবং ‘লিঙ্কম্যান’-দের খোঁজে এ রাজ্যেও অভিযান হচ্ছে। গত ৫-৬ নভেম্বর বাঁকুড়া ও পূর্ব মেদিনীপুর থেকে তিন জনকে ধরা হয়েছে। উত্তরবঙ্গে কিছু সন্দেহভাজনের নাম মেলায় অভিযান শুরু হয়েছে।

এ দিন ভোরে এনআইএ ও এসটিএফ যৌথ ভাবে হলদিবাড়ির ধারানগরে অভিযান চালায়। সে বাড়ির চারদিক ঘিরে ফেলে বিএসএফ ও পুলিশ। বাড়ির বাসিন্দা কেটারিং সংস্থার কর্মী এক যুবকের খোঁজে গিয়েছিল এনআইএ। স্থানীয় সূত্রের খবর, যুবক কর্মসূত্রে বাইরে থাকায়, তাঁর মা-কে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি, কিছু কাগজ-নথি দেখে দলটি। ওই পরিবারটির কিছু পরিচয়পত্র দেশ-বিরোধী কাজে ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযো‌গ। টাকার বিনিময়ে পরিচয়পত্রগুলি ব্যবহার হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই যুবকের মা বলেন, “ওঁরা বিভিন্ন নথি দেখেছেন। কিছু সই করিয়েছেন।”

শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ির ক্যানাল রোডের কাছে একটি বাড়ি থেকে আটক করা হয় ব্যক্তিকে। নিউ জলপাইগুড়ি থানায় নিয়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। ওই ব্যক্তি এলাকায় প্রায় এক বছর ধরে ভাড়া রয়েছেন। প্রসাধন সামগ্রী বিক্রির কাজ করেন। তাঁর আধার-সহ অন্য নথিপত্র, মোবাইল খতিয়ে দেখা হয়েছে। ভাড়াবাড়ির মালিক জানান, ভাড়াটে তাঁকে জনিয়েছিলেন, তিনি জলপাইগুড়ির পুঁটিমারির বাসিন্দা।

এনআইএ সূত্রের খবর, এই অভিযানে নেমে ত্রিপুরা, মেঘালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকার কিছু লোকের নাম তারা পেয়েছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে আল কায়দার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে। তাদের মোবাইলের সিম-কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ বিভিন্ন নথি ব্যবহার করে অনুপ্রবেশ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের মানব-পাচারের ‘এজেন্টদের’ সাহায্য করছে বলেও মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে সরাসরি নাশকতার ইঙ্গিত না মিললেও, আল কায়দার ‘নেটওয়ার্ক’-কে চাঙ্গা করা, যুবকদের ভুল বুঝিয়ে ‘এজেন্ট’ তৈরি করা এবং অর্থ জোগাড়ের মতলবে ওই চক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন
Advertisement