শীতের বিকেল। বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধা। মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরোতেই বৃদ্ধাকে দেখে গাড়িতে না উঠে সটান এগিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভ্রকেশের বৃদ্ধা তখনও বুঝে উঠতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছেন। বৃদ্ধার মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শরীর কেমন আছে?” বৃদ্ধার চোখেমুখে বিস্ময়। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তিনি বাড়ির ভিতরে যাবেন। তাঁদের ঘর দেখবেন। বানারহাটের আদর্শপল্লির বাসিন্দা চুরাশি বছরের প্রতিমা ভদ্র মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে গেলেন ঘরের ভিতরে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিনও।
কাঠের বাড়ি। বিছানাতেই বসতে দেওয়া হল মুখ্যমন্ত্রীকে। বড় কাপে ঘন দুধ এবং চিনি দিয়ে চা বানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এগিয়ে দিলেন বৃদ্ধার পুত্রবধু রীতা পোখরেল ভদ্র। চা বানানোর সময়ে দৃশ্যতই হাত
কাঁপছিল তাঁর। পরে বললেন, “মুখ্যমন্ত্রীর জন্য কোনও দিন চা বানাব ভেবেছি নাকি!”
রবিবার দুপুরে আলিপুরদুয়ার থেকে বানারহাটে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, সোমবার জলপাইগুড়ির বানারহাটের তরুণ সঙ্ঘের মাঠে প্রশাসনিক সভায় যোগ দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। দুপুরে বানারহাট স্কুলের মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নেমে আদর্শপল্লির শীতলা মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই মন্দির থেকে বেরিয়েই মমতার নজরে পড়েন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধা প্রতিমা ভদ্র। মুখ্যমন্ত্রীর আসার প্রস্তুতি কয়েক দিন ধরেই চলছিল। সকাল থেকে রাস্তায় পুলিশ দেখে বৃদ্ধা জেনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এই রাস্তা দিয়েই যাবেন। ভিআইপি কনভয়, আয়োজন দেখার জন্য বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে ছিলেন বাড়ির গেটে। মুখ্যমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পরে তিনি বলেন, “এত দিন টেলিভিশনে, কাগজে দেখেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি যে একেবারে আমার সামনে দাঁড়িয়ে ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করবেন এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না! মুখ্যমন্ত্রী আমার ঘরে এসে আমাদের বিছানায় বসবেন তা-ও অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে!” কথা বলতে বলতে আবেগে চোখ দিয়ে জল গড়াতে থাকে তাঁর। তিনি বলেন, “আমি কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা, বয়স্ক ভাতা এ সব নিয়ে মাথা ঘামাইনি, আমাকে কেউ বলেওনি। মুখ্যমন্ত্রী আজ আমার বাড়িতে এলেন, তাতেই আমার সব পাওয়া হয়ে গেল।’’
চা খেয়ে বেরিয়ে আদর্শপল্লিতে ভিড় করা বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। হাঁটতে-হাঁটতে সোয়েটার, শাড়ি, কম্বল, চকোলেট ও খেলার নানা সামগ্রী বিলি করতে থাকেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এক জন বয়স্ক মহিলা আমাকে দেখার জন্য বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি ওঁর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। চা খেয়েছি। খুব ভাল লাগল ওঁদের সঙ্গে
সময় কাটিয়ে।’’