এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
গুলিতে স্কুলছাত্রের মৃত্যুর পরে মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দাদের ভাবাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতা। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সামিউল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র-সহ তার সহপাঠী সফি আলিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া ‘সেভেন এমএম’ পিস্তলটি ভিন্ রাজ্য থেকে নিয়ে আসা হয়ে থাকতে পারে। এই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে, স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে কী ভাবে যোগ তৈরি হল ভিন্ রাজ্যের অস্ত্র-কারবারিদের? এ দিকে, কে জোগাড় করেছিল আগ্নেয়াস্ত্র, তা নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে হত ও ধৃত ছাত্রের পরিবারের।
কালিয়াচকে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানার হদিস একাধিক বার মিলেছে। গ্রেফতার হয়েছে বিহারের মুঙ্গেরের অস্ত্র প্রস্তুতকারকও। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দাবি, কালিয়াচকের কিছু কারবারি মুঙ্গের থেকে অস্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে। প্রশিক্ষিত সেই লোকজনই কালিয়াচকের আমবাগান, লিচুবাগানকে কাজে লাগিয়ে অস্ত্র তৈরির কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, রেল ও সড়কপথে বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকেও কালিয়াচকে ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র।
সে সব আগ্নেয়াস্ত্র কী ভাবে হাতে-হাতে ঘুরছে কালিয়াচকে? স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় মেলে ‘সেভেন এমএম’ পিস্তল, পাঁচ থেকে সাত হাজারে পাওয়া যায় পাইপগান। দাবি, সেই কারণেই কালিয়াচকে পারিবারিক বিবাদেও আকছার গুলি চালানোরঅভিযোগ ওঠে।
কালিয়াচকের সুজাপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আদিল হোসেন বলেন, ‘‘আগ্নেয়াস্ত্র সহজলভ্য হয়ে ওঠার কারণে এখন ছাত্রদের হাতেও আগ্নেয়াস্ত্র ঘুরছে। পুলিশ আরও সতর্ক হলেই বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার ঠেকানো যাবে। তবে একই সঙ্গে সচেতন হয়ে উঠতে হবে সমাজকেও।’’ মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘‘বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার রুখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে, অভিযান আরও বাড়ানো হবে।’’
গত বুধবার কালিয়াচকের শ্রীরামপুরে বাড়ি থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সামিউল ইসলামের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনায় তারই বন্ধু সফি আলিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ‘ভিডিয়ো রিল’ বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে দাবি পুলিশের। এ দিন সামিউলের বাবা রেজাকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘আমার ছেলের কাছে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। সফিই আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করেছে।’’ যদিও সফির বাবা আরিফ আলি বলেন, ‘‘আমার ছেলের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’
অর্থনৈতিক ভাবে অতি-সাধারণ পরিবারের কিশোরেরা আগ্নেয়াস্ত্র কেনা বা জোগাড়ের টাকা পেল কোথা থেকে, সে প্রশ্নও ভাবাচ্ছে পুলিশকে।