শিলিগুড়ির নিউ চামটা চা বাগানের রিসর্ট। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি বাণিজ্যিক সংস্থার কর্ণধারের ছেলের বিয়ে হল শিলিগুড়ি শহরের অদূরে একটি চা বাগান ঘেরা রিসর্টে। হেলিকপ্টারে এলেন নববধূ ও পাত্র। আকাশ থেকে উড়ল গোলাপের পাপড়ি। মাঝআকাশে হল মালা-বদল। ভিন রাজ্য থেকে এসে পাহাড়ের কোলে এমন বিয়ের আসর অনেকেরই চোখে ধাঁধিয়েছে।
পর্যটন দফতরের বক্তব্য, এমন বিয়ের অনুষ্ঠান হল ‘মাইস’ পর্যটনের একটি অঙ্গ। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সকে পর্যটন কেন্দ্রের বাইরে ‘মাইস ডেস্টিনেশন’ হিসেবে তুলে ধরার কাজ শুরু হয়েছে।
‘মিটিং, ইনসেন্টিভ, কনফারেন্স ও এক্সিবিশন’— সংক্ষেপে ‘মাইস’ পর্যটনকে উত্তরবঙ্গের একাংশে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজ়নেস সামিটের’ অঙ্গ হিসাবে থাকা ‘মাইস কনক্লেভে’ যোগ দেওয়া দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা উত্তরবঙ্গে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন রাজ্যের পর্যটন সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী।
পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, ৭-৮ ফেব্রুয়ারি দলটি উত্তরবঙ্গে আসছে। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি এলাকাকে দেশ-বিদেশের ওই বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। পর্যটন দফতরের এক যুগ্ম সচিব বলেন, ‘‘সাধারণ পর্যটনের বিকাশ বা প্রকল্পের বাইরে মাইস পর্যটন এখন গোটা বিশ্বে তথা দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। রাজ্যের কলকাতার পরে পাহাড়-তরাই এবং ডুয়ার্সকে এর জন্য ভাবা হয়েছে।’’
দফতরের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, বেসরকারি স্তরে একাধিক তারাখচিত হোটেল, রিসর্ট এবং সরকারি ক্ষেত্রে একাধিক ‘কনভেনশন সেন্টার’ কলকাতায় তৈরি হয়ে গিয়েছে। এ বার পালা উত্তরবঙ্গের। বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারের আদলে শিলিগুড়িতে নতুন কনভেনশন সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত মোটামুটি চূড়ান্ত। দু’টি জমিও সরকার দেখেছে। পাহাড় এবং ডুয়ার্সে একাধিক চা পর্যটন রিসর্ট রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থাও নানা অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা শুরু করেছে।
নানা স্তরের শিল্প সম্মেলন, কর্পোরেট বৈঠক, নানা সংস্থার তরফে কর্মী, এজেন্ট বা লোকেদের ইনসেন্টিভ হিসেবে ঘোরানোর প্যাকেজ়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরের প্রদর্শনী ঘিরে এখন ‘মাইস’ পর্যটনের রমরমা বলে পর্যটন দফতরের অফিসারেরা জানাচ্ছেন। তাঁদের কয়েক জন জানান, সম্প্রতি শিলিগুড়িতে একাধিক জাতীয় স্তরের জনপ্রিয় গায়ক-গায়িকাদের মিউজ়িক ইভেন্ট হয়েছে। গত বছর জি-২০ সামিট হয়েছে শিলিগুড়িতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা এসে কাজ করেছে। হোটেল, গাড়ি, অনুষ্ঠানস্থল সব মিলিয়ে কাজ হয়েছে। সেখানে পর্যটন বিকাশে ‘মাইস’-এর ভূমিকা সক্রিয় ভাবে সামনে আসে। এই অঞ্চলে অনুষ্ঠান, শো, সম্মেলন জাতীয় কিছু হলেই সিকিম, বিহার, অসম, নেপাল, থেকেও লোকেরা শিলিগুড়ি আসেন। আগামী দিনে তা বাড়ানোর জন্যেই এ বারের প্রতিনিধি সফর।