Nisith Pramanik

কনভয়ে হামলার ২৪ ঘণ্টা পরে প্রতিক্রিয়া জানাতেও ‘লেটলতিফ’ নিশীথ! মন্ত্রীর লক্ষ্যে পুলিশ, তৃণমূলও

রবিবার নিজের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে নিশীথ অভিযোগ করেন, শনিবারের হামলার জন্য তৃণমূল যত না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী পুলিশ। আঙুল তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেও।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার ও দিনহাটা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩৮
Central Minister Nisith Pramanik attacks TMC in press conference after attack

বাঁ দিকে রবিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ নিজের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে নিশীথ, ডান দিকে শনিবার হামলার ঘটনার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলা হয় দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ। তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষে যে উত্তাপ ছড়ায় তার জের চলছে রবিবারও। রাজ্য জুড়ে থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে বিজেপি। এই প্রেক্ষিতে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডেপুটি। ব্যবধান মোটামুটি ২৪ ঘণ্টার। তবে ব্যবধান আরও বাড়ল। কারণ, তিনি নিজেই যে সময় দিয়েছিলেন তা পার করে সাংবাদিক বৈঠকে এলেন এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর। এখানেও তিনি যেন সেই ‘লেটলতিফ’। যে গল্পে অফিসবাবু রোজ দেরি করে অফিসে পৌঁছন। আর যেটা নাকি তৃণমূল থেকে বিজেপি হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়া নিশীথের নামের সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে। দেরিতে শুরু করা সাংবাদিক বৈঠকে নিশীথ দাবি করলেন, তাঁকে খুনের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। বেছে বেছে বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আর তাতেও উঠেছে প্রশ্ন। এমন গুরুতর অভিযোগ করতে এতটা সময় নিলেন কেন নিশীথ?

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে কোচবিহার থেকে জিতে সাংসদ হন তৃণমূলত্যাগী নিশীথ। তাঁর পরিচিতরা বলেন, যে কোনও কর্মসূচি নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর শুরু করতেই অভ্যস্ত নিশীথ। বিজেপি সূত্রে খবর, নিশীথের এই অভ্যেস নিয়ে দলের অভ্যন্তরেও অনেকেই অনেক সময় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কথায়, সাংগঠনিক কাজে নিশীথকে ডেকে সময় মতো না পাওয়ারও ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। সেই নিশীথ রবিবারও ‘লেট’ করলেন। তাঁর উপরে হামলার ঘটনায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রতিক্রিয়া দিয়ে দিয়েছেন। হুঁশিয়ারির সুরে বলেছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। সেখানে অশান্তি করলে মারের বদলা মার জুটবে।’’ কিন্তু নিশীথ সময় নিলেন। সময় দিয়েও লেট করলেন।

Advertisement

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপর হামলার প্রেক্ষিতে রাজ্যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের কথা বলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তবে এখনও পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, অমিত শাহ বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও মন্ত্রীর থেকে নিশীথে গাড়িতে হামলার ঘটনার প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

সোয়া ১টা নাগাদ নিজের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে নিশীথ অভিযোগ করেন, শনিবারের হামলার জন্য তৃণমূল যত না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী পুলিশ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথায়,‘‘শনিবার তৃণমূলের ৬০-৭০ জন কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী আমাদের বাধা দেয়নি। বাধা দিয়েছে পুলিশ। ব্যারিকেড করে রেখেছিল তারা। তার পর তৃণমূল ইটবৃষ্টি শুরু করে।’’ যদিও তৃণমূল এই ঘটনার সব দায় চাপিয়েছে নিশীথের উপরই। রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেছেন, ‘‘পূর্বপরিকল্পিত হামলা করিয়েছেন নিশীথ।’’

শনিবারের অশান্তির ঘটনার জন্য নিশীথ আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহের দিকে। বলেন, ‘‘আমাকে আক্রমণ মানে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আক্রমণ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বিরুদ্ধে ‘হেট স্পিচ’ (ঘৃণাভাষণ) দিয়েছিলেন। তার পর তাঁর অনুগামীরা আমার বাড়ি ঘেরাও করেন। উদয়ন গুহ থেকে অন্যান্য তৃণমূল নেতা ঘৃণাভাষণ দেন। এই ভাবে বাংলার রাজনীতির পরিবেশ কলুষিত করছেন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষতি হচ্ছে। একপেশে ভাবে কাজ করছে পুলিশ।’’ এর পর ছবি দেখিয়ে শনিবার তাঁর উপর কী ভাবে আক্রমণ হয়েছিল তার বিবরণ দিতে গিয়ে নিশীথ বলেন, ‘‘পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফেলেছে আমার গাড়িতে। গাড়ির তিন দিক থেকে ঘেরাও করে আক্রমণ করা হয়। গুলিও চলেছে। বুলেটের দাগ পাওয়া গিয়েছে। তা বিশেষজ্ঞদের আমরা জানাব। কিন্তু যে পুলিশ অফিসাররা এ সব করছেন, তাঁরা কী ভাবে এ সব করছেন, সেটাও ভাবার।’’ নিশীথ আরও বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং পুলিশমন্ত্রী। তার পরেও ভারত সরকারের এক জন নির্বাচিত প্রতিনিধি নিজের লোকসভা কেন্দ্রেই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন! কোথাও কি রাজনীতির মাটি হারিয়ে ফেলেছে তৃণমূল? ইঙ্গিত তো সে দিকেই।’’ নিশীথ অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তার জন্য এই পরিস্থিতি সৃষ্টির দরকার নেই বলে কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘তার চেয়ে বলে দিক, কোথায় কখন মারবে। সেখানে গিয়ে হাজির হব। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা বন্ধ করা হোক।’’ শনিবারের ঘটনা দিয়ে জরুরি অবস্থার সময়কার তুলনা টেনে বলেন, ‘‘এখন তো গৃহবন্দি করে রাখা হচ্ছে এখানকার বিজেপি কর্মীদের।’’

মোটের উপর নিশীথের আক্রমণ অভিষেক-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব এবং তারও আগে পুলিশকে। এক রাজবংশী যুবকের বিএসএফের গুলিতে মৃত্যের ঘটনায় তৃণমূল নিশীথের বাড়ি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছিল। আর শনিবার তাঁর গাড়িতে হামলার ঘটনায় নিশীথ বললেন তিনি রাজবংশী সমাজের বলেই বলেই কি তাঁকে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘চেষ্টা করেও উত্তরবঙ্গের মানুষের ভালবাসা, মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারেনি তৃণমূল। রাজবংশী গিমিক দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। আলিপুরদুয়ারে গিয়ে আদিবাসীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছে, দার্জিলিঙে গিয়ে গোর্খাদের মন পেতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রত্যেক জায়গায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের উপর কি তারই প্রতিশোধ নিচ্ছে? এক জন রাজবংশী ছেলে হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছি বলে কি প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা? নাকি নিজেদের দলের নেতার উপর কোনও ভরসা নেই তৃণমূলের?”

পরিশেষে সুকান্তরা যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের দাবি নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন, তা থেকে অনেকাই দূরে থেকে নিশীথের মন্তব্য, ‘‘গণতান্ত্রিক ভাবে আমরা লড়াই করব।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সব পুলিশ অফিসার বা সব তৃণমূলী কর্মী খারাপ নন। কিন্তু তাঁদের বাধ্য করা হচ্ছে এই সব অপকর্ম করতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement