Ananta Maharaj

এ বার অনন্তের ‘গুরুত্ব’ নিয়েই প্রশ্ন বিজেপিতে

অনন্ত বিজেপির উত্তরবঙ্গের সেই প্রভাবশালী নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত। দু’জনকে মাঝেমধ্যেই এক সঙ্গে দেখা যায়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:০৭
অনন্ত মহারৈজ।

অনন্ত মহারৈজ। —নিজস্ব চিত্র।

রাজবংশী ভোট টানতে গ্রেটার নেতা অনন্ত মহারাজ দলের ‘বাজি’ হতে পারে বলে মনে করেছিলেন রাজ্য বিজেপির একটি অংশ। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে পঞ্চায়েত ভোটের পরে অনন্তকে রাজ্যসভার সাংসদও করা হয়েছে, যার পিছনে দলের উত্তরবঙ্গের সেই অংশের প্রভাবশালী কোনও নেতার হাত ছিল বলেই দাবি। যদিও রাজ্যভাগ নিয়ে বিতর্কই হোক বা অন্য কোনও কারণেই হোক, অনন্তকে নিয়ে অসন্তুষ্ট দলের রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশ। তা সত্ত্বেও মূলত উত্তরের সেই নেতার হস্তক্ষেপেই অনন্ত রাজ্যসভায় ঠাঁই পান। এর পরে রাজবংশী-প্রধান ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে বিজেপির হারে স্বাভাবিক ভাবেই একাধিক প্রশ্ন উঠছে দলের মধ্যে। ধূপগুড়ির প্রচারেও অনন্তকে নিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। তার পরেও দল জিততে পারেনি। তাই দলেরই একটি অংশ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, দলীয় প্রচারে অনন্ত আদৌ কি উপযুক্ত মুখ? এই পরিস্থিতিতে, তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করে বিজেপির কোনও লাভ হয়নি বলেও দলের সেই অংশ প্রচার করতে শুরু করেছে।

Advertisement

অনন্ত বিজেপির উত্তরবঙ্গের সেই প্রভাবশালী নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত। দু’জনকে মাঝেমধ্যেই এক সঙ্গে দেখা যায়। ধূপগুড়ি হাতছাড়া হওয়ায় সেই নেতার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনন্ত-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সেই নেতাকে রবিবার ফোনে পাওয়া যায়নি। মেসেজ করলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। অনন্ত অবশ্য ধূপগুড়ি নির্বাচনের হারের দায়ভার নিতে চাননি। তিনি স্পষ্ট জানান, বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচারে তিনি একবারই গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি শেষ লগ্নে একদিনই প্রচারে গিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষের প্রচুর উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছি। স্থানীয় নেতৃত্বের কোনও ত্রুটির জন্য পরাজয় হতে পারে। যদিও এই বিষয়টি আমি তেমন ভাবে কিছু বলতে পারব না। এটা বিজেপি দল বলতে পারবে।’’

কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে-র সঙ্গে উত্তরের সেই বিজেপি নেতার ভাল সম্পর্ক বলে দলীয় সূত্রে খবর। ধূপগুড়িতে প্রচারের শেষ লগ্নে, অনন্তের সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন নিখিল। তিনি বলেন, ‘‘সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় হয়েছে। যে কোনও উপনির্বাচনে শাসকের পক্ষেই সাধারণত রায় যায়।’’

গত বারের লোকসভা ভোটে কোচবিহার থেকে শুরু করে প্রায় উত্তরবঙ্গের সর্বত্র ভাল ফল করেছিল বিজেপি। সেই সময় অনন্তের সঙ্গে সখ্য ছিল বিজেপির। পরে তৃণমূলও অনন্তের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায়। একই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা গিয়েছে অনন্তকে। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে তৃণমূল নেতারা বার বার দেখা করেছেন অনন্তের সঙ্গে। কোচবিহার তো বটেই, উত্তরের সর্বত্রই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করে তৃণমূল। তার অল্পদিনের মধ্যেই অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠায় বিজেপি।

এরই মধ্যে এসে পড়ে ধূপগুড়ির উপনির্বাচন। ওই এলাকায় রাজবংশী ভোটারের সংখ্যা বেশি। তার পরেও সেখানে হেরে যায় বিজেপি। দলের অনেক নেতা এখন প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলছেন, অনন্তকে সাংসদ করে কী লাভ হল? দীপ্তিমান সেনগুপ্তের মতো বিজেপি নেতা ফেসবুকে একাধিক প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘দলের কর্মী-নেতারা গুরুত্ব পাচ্ছেন না। বাইরের উপরে ভরসা করা হচ্ছে বেশি। তার ফল কি হতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছে এই উপনির্বাচন।’’ তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘অনন্ত মহারাজের মতো মানুষকে এখন আর কেউ বিশ্বাস করেন না।’’

আরও পড়ুন
Advertisement