নেতা, জয়ী প্রার্থী অপহরণের অভিযোগ

বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই বিরোধীদের ঘর ভাঙতে ‘অপারেশন কৃষ্ণ’ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৩
road block of BJP at Jalpaiguri

বিজেপির জাতীয় সড়ক অবরোধ জলপাইগুড়িতে।  ছবি: সন্দীপ পাল

তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির এক বুথ সভাপতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের বিজয়ী প্রার্থী তাঁর স্ত্রীকে ‘অপহরণের’ অভিযোগ তুললেন ওই দম্পতির পুত্র। রবিবার জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন বেলাকোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রাহুল রায়। সোমবার সকালে সমাজ মাধ্যমে একটি ভিডিয়ো (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিয়োয় ‘অপহৃত’ ওই বিজেপির বুথ সভাপতি অমর রায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি স্বেচ্ছায় কৃষ্ণ দাসের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’ যদিও রাহুল এ দিন ফের দাবি করেন, তাঁর বাবা অমর রায় এবং মা সদ্য-জয়ী বিজেপি প্রার্থী পূর্ণিমা রায়কে তৃণমূলের এসসি-এসটি সেলের সভাপতি কৃষ্ণ দাসের বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে।

Advertisement

রাহুল এ দিন দাবি করেন, রবিবার সকালে কাজে বেরিয়ে বাড়ি ফিরে তিনি জানতে পারেন, তাঁর বাবা-মাকে কৃষ্ণ দাসের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে কৃষ্ণের বাড়িতে গেলে রাহুলকেও আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। রাহুল কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা অভিযোগে লিখেছেন, ‘‘রবিবার সকালে কৃষ্ণ দাসের বাড়িতে গেলে আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমাকেও আটকে রাখা হয়। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আমি পালাতে সক্ষম হয়েছি।”

এই অভিযোগ ও পাল্টা দাবি ঘিরে এ দিন সকাল থেকে তেতে ওঠে জলপাইগুড়ি। চার লেনের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। অপহরণ করে আটকে রাখার অভিযোগ উড়িয়ে কৃষ্ণ দাবি করেন, ‘‘তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের কাজ দেখে বিজেপির অনেকেই স্বেচ্ছায় আসছেন, সদর ব্লকের আরও অনেকে আসবেন। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি আমরা দখল করব।” যদিও জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খাণ্ডবহালে বলেন, “অভিযোগ হয়েছিল। কিন্তু তার পরেই যাঁদের অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁদের বক্তব্যের ভিডিয়ো ফুটেজ মিলেছে। ওঁরা বলেছেন, স্বেচ্ছায় অন্য দলে যোগ দিয়েছেন, কেউ অপহরণ করেনি। সেটা আমরা নথিবদ্ধ করেছি।”

গত পঞ্চায়েত ভোটে সদর ব্লকে কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। এ বছর বড়সড় অভিযোগ ওঠেনি। সদর ব্লকে তৃণমূলের ফল ভাল হয়নি, সে কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন দলের জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ। এ বার বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই বিরোধীদের ঘর ভাঙতে ‘অপারেশন কৃষ্ণ’ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। ২৯ সদস্যের বেলাকোবা গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি জিতেছিল ১৫টি আসনে, তৃণমূলের দখলে আসে ১২টি এবং নির্দল জেতে দু’টি আসনে। গত রবিবার থেকে কৃষ্ণ ‘বাহিনী’ নিয়ে গিয়ে নির্দল-সহ বিরোধীদের তিন সদস্যকে তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ উড়িয়ে কৃষ্ণ শুধু দাবি করেন, “বেলাকোবা অঞ্চল আমাদের হচ্ছে।”

বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখে অনেকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাচ্ছে। লোকসভা ভোটের পরে, নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়ন দেখে তৃণমূলের প্রধান, সভাপতিরা বিজেপিতে আসবেন।”

এ দিকে, বিজেপির মতো তৃণমূলও নিজেদের পঞ্চায়েত সদস্যদের রিসর্টে পাঠাচ্ছে। গৌড়ীকোণ থেকে লাটাগুড়ির একাধিক রিসর্টে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, গোষ্ঠী সমীকরণে জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যদের অনেকেই বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারেন, তাই সকলকে এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

যদিও তৃণমূলের অন্দরের আরেকটি অংশের ব্যাখ্যা, বিজেপির একাধিক পঞ্চায়েত সদস্যকে দলে যোগদান করিয়ে রিসর্টে পাঠাচ্ছে তৃণমূল। শুধু বিজেপি থেকে আসা সদস্যদের রিসর্টে রাখলে ভুল বার্তা যাবে এবং দলের অন্দরেও ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, সে কথা ভেবে একই সঙ্গে নিজেদের জেতা সদস্যদের রিসর্টে পাঠাচ্ছে তৃণমূল।

আরও পড়ুন
Advertisement