বেটিং এবং অপহরণকাণ্ডে ধৃতদের নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
বেটিং লড়ার জন্য এক যুবককে লক্ষাধিক টাকা দেন ব্যবসায়ী। কিন্তু অনলাইন বেটিংয়ে যুবক হেরে যেতেই তাঁকে অপহরণ করান তিনি। যুবকের পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের ছক কষা হয়েছিল। কিন্তু পুরো পরিকল্পনাই ভেস্তে গিয়েছে। অপহরণ-কাণ্ডে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। চলছে সেই ব্যবসায়ীর খোঁজ। জলপাইগুড়ির ভিআইপি মোড়ের ঘটনা।
মঙ্গলবার রাতে এনজেপি থানার ইস্টার্ন বাইপাসের ভিআইপি মোড়ে অভিনন্দন পণ্ডিত ও তাঁর বাবা বাচ্চু পণ্ডিত নিজেদের দোকানে কাজ করছিলেন। হঠাৎ ওই দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় একটি নীল রঙের স্কুটার। দুই যুবক স্কুটার থেকে নেমে অভিনন্দনদের দোকানে ঢোকেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে ওই যুবককে টেনেহিঁচড়ে স্কুটারে তুলে নিয়ে চলে যান দু’জন। এর কিছু ক্ষণ পরেই অভিনন্দনের পরিবারের কাছে একটি ফোন আসে। তাতে বলা হয় ওই যুবককে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ দিলে সুস্থ শরীরেই বাড়ি ফিরবেন যুবক। অন্যথায় তাঁর ক্ষতি হয়ে যাবে। মোটা অঙ্কের টাকা মুক্তিপণ দিতে রাজি হয়ে যায় অভিনন্দনের পরিবার। কথামতো সেই রাতেই টাকা নিতে একটি সাদা রঙের গাড়ি বাইপাসের কানকাটা মোড়ে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু স্থানীয় লোকজন গাড়িটিকে আটকান। ‘অপহরণকারীরা’ অবশ্য পালিয়ে যান।
ওই ঘটনার পর মুক্তিপণ নিতে আবার একটি কালো রঙের গাড়ি পৌঁছয় ওই এলাকায়। সেটিকেও আটকান এলাকাবাসী। দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় মারামারি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ। গাড়িটিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় তারা। ওই গাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয় অপহৃত অভিনন্দনকে। অন্য দিকে, দু’পক্ষের মারামারিতে জখম হন অভিনন্দনের পরিবারের দুই সদস্য। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তাঁদের।
অপহরণের অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে অভিনন্দন নামে ওই যুবক বেটিং লড়তেন, অনলাইনে জুয়া খেলতেন। বেটিং লড়ার জন্য এক ব্যবসায়ী তাঁকে কিছু টাকাও দেন। কিন্তু অনলাইনে বাজি লড়ে হেরে যান যুবক। সেই টাকা উদ্ধার করতেই ওই ব্যবসায়ী কয়েক জন লোক লাগিয়ে অভিনন্দনকে অপহরণ করিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চান। ওই ঘটনায় মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম পিন্টু মণ্ডল, রাহুল রায়, সুজন কুন্ডু, হার্দিক কুমার এবং রোশন লামজাদে। রোশনের বাড়ি সিকিমে, হার্দিক গুজরাতের বাসিন্দা। বাকিরা শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকার। ধৃতদের আর জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করায় পুলিশ। মামলার মূল অভিযুক্ত ওই ব্যবসায়ীর খোঁজ চলছে।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিংহ বলেন, ‘‘অনলাইন বেটিং বা জুয়ায় হেরে টাকা আদায় করার জন্য এত কাণ্ড। আমরা মূল অভিযুক্তকে খুঁজছি। খুব তাড়াতাড়ি তাঁকেও গ্রেফতার করা হবে। তদন্তের স্বার্থে এখনই তাঁর নাম সর্বসমক্ষে আনছি না। বাকি ধৃতদের জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করিয়ে রিমান্ডের আবেদন করেছি।’’