ফাইল ছবি।
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পর্যবেক্ষক থাকবেন? এই নিয়ে মঙ্গলবারও সিদ্ধান্ত হল না কলকাতা হাই কোর্টে। বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার কমিশন বনাম কমিশনের সেই মামলা উঠেছিল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু মামলার শুনানি হলেও শেষ পর্যন্ত রায় ঘোষণা হয়নি। দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আপাতত এই মামলায় রায় ঘোষণা স্থগিত রাখা হল।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফে মঙ্গলবার হাই কোর্টে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অমন লেখি। আদালতকে তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকারের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করতে পারে না আদালত। মানবাধিকার কমিশন মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কি না, তা দেখে। সেই জন্যই পঞ্চায়েত ভোটের হিংসা এবং অশান্তি দীর্ণ এলাকাগুলিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগের কথা বলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। হাই কোর্টের একক বেঞ্চের উচিত হয়নি সেই নির্দেশে হস্তক্ষেপ করা। কারণ মানবাধিকার কমিশন নিজেরা তথ্য সংগ্রহ করে এবং তার ভিত্তিতেই সুপারিশ করে। আইনও বলছে, মানুষের অধিকার রক্ষার পক্ষে একমাত্র সওয়াল করবে মানবাধিকার কমিশন। এখানে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। অথচ সিঙ্গল বেঞ্চ এই বিষয়টিই ভুলে গিয়েছে।
রাজ্যে ২০১৮ এবং ২০২১ সালের ভোটের সময়ে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে এর পর কমিশন বলে, ‘‘এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্যই আমরা রক্ষকের ভূমিকা পালন করতে চেয়েছি। মানবাধিকার যেখানে নিত্যদিন খর্ব হচ্ছে, সেখানে আমরা মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারি না।’’
কিন্তু কমিশনের এই যুক্তির পাল্টা যুক্তি দিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন বলে, ‘‘মানবাধিকার কমিশনের এই কাজের পিছনে আদতে রাজনৈতিক মদত কাজ করছে। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হয়! নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যেখানে আইনশৃঙ্খলা নজরে রাখছে। আদালতও প্রতি দিন মানুষের অধিকার নিয়ে নানা নির্দেশ দিচ্ছে। সেখানে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান না হয়েও মানবাধিকার কমিশন হস্তক্ষেপ করতে আসছে কেন?’’
কমিশনের তরফে আদালতে হাজির ছিলেন আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তো রোজই নানা নির্দেশ দিচ্ছে আদালত। কমিশন তো তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলছে না। তা হলে মানবাধিকার কমিশন হঠাৎ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অশান্তি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কেন?’’
এ ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের একপেশে বলেও ইঙ্গিত করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘‘ভোটে অশান্তি শুধু এ রাজ্যে নয়। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, মণিপুর সর্বত্র হয়। সেখানেও কি মানবাধিকার কমিশন পর্যবেক্ষক পাঠায়?’’
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের কথাও হাই কোর্টে উল্লেখ করেছেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট তো বলেছে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তৃতীয় কোনও পক্ষ ঢুকতে পারে না। তা সত্ত্বেও রাজ্যপাল এবং আদালত এ বিষয়ে নজর রাখছেন। এটা ভাল। কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্যে এসে কী এমন আলাদা করবে? কতটা অশান্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তারা?’’