Bogtui Murder

বগটুই: সাক্ষী বিরূপ, দাবি সিবিআইয়ের

স্বজনহারা পরিবারের তিন সদস্য নেকলাল শেখ, ফটিক শেখ ও খুশি খাতুন এ দিন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সন্দীপ কুন্ডুর এজলাসে সাক্ষ্য দিতে এসে অভিযুক্তদের চিনতে পারেননি।

Advertisement
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪৪
বগটুই গণহত্যায় অভিযুক্ত আনারুলকে কোর্টে নিয়ে আসছে পুলিশ।

বগটুই গণহত্যায় অভিযুক্ত আনারুলকে কোর্টে নিয়ে আসছে পুলিশ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বে এসে বগটুই হত্যাকাণ্ড মামলা কি ‘অন্য’ মোড় নিতে শুরু করেছে? সোম ও মঙ্গলবার রামপুরহাটের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে সাক্ষ্যগ্রহণে হাজিরায় এসে স্বজনহারারা অভিযুক্তদের না চিনতে পারায় এই প্রশ্ন উঠেছে। সোমবার স্বজনহারা তিন ভাই সাক্ষী দিতে এসে এজলাসে অভিযুক্তদের চিনতে পারেননি। মঙ্গলবারও কোর্টে একই কাণ্ড। তাঁরা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু, অভিযুক্তদের চিনতে পারেননি। বিরোধী শিবির ও মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের প্রশ্ন, কোথাও কি কোনও ‘সমঝোতা’ হয়ে গিয়েছে?

Advertisement

২০২২ সালের ২১ মার্চ রাতে রামপুরহাট থানার ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা ও স্থানীয় উপপ্রধান ভাদু শেখকে। সেই রাতেই ভাদুর অনুগামীরা বগটুইয়ের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তাতে ৯ জন মহিলা-সহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বগটুই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পায় সিবিআই।

এই দু’বছরে স্বজনহারা পরিবারের সদস্য ফটিক শেখ, মিহিলাল শেখ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বগটুই হত্যাকাণ্ডের বছরপূর্তিতে বিজেপির তরফ থেকে গ্রামে শহিদ বেদিও নির্মাণ করা হয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা শহিদ বেদি তৈরি করা হয়েছে। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বগটুই গ্রাম থেকে বিজেপির হয়ে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যেরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও তৃণমূলের কাছে হেরে গিয়েছেন। তার পরেই মিহিলাল ছাড়া বর্তমানে স্বজনহারা পরিবারের অধিকাংশই ফের শাসক-শিবিরে ঝুঁকেছেন বলে এলাকার খবর।

স্বজনহারা পরিবারের তিন সদস্য নেকলাল শেখ, ফটিক শেখ ও খুশি খাতুন এ দিন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সন্দীপ কুন্ডুর এজলাসে সাক্ষ্য দিতে এসে অভিযুক্তদের চিনতে পারেননি। সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বী সোমবারের মতো এ দিনও তিন জন সাক্ষীকে ‘বিরূপ’ বলে দাবি করেছেন। সোমবার ২৩ অভিযুক্তদের মধ্যে ১৪ জন এজলাসে থাকলেও এ দিন ২৩ জনই ছিলেন। পার্থের দাবি, ‘‘যে হেতু ওঁদের (স্বজনহারা) কিছু লোক ভাদু শেখ খুনের মামলায় জড়িত, তাই ওঁদের মধ্যে গ্রামে সমঝোতা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। সাক্ষীদের কোথাও একটা চাপ দেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা আদালতে জানিয়েছি।’’

ফটিক শেখ ও নেকলাল শেখ মন্তব্য করতে চাননি। তবে, এ দিন আদালত চত্বরে স্বজনহারা পরিবারের এক যুবক দাবি করেন, প্রথম থেকেই তাঁদের উপরে কিছু না বলার ‘চাপ’ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অনেককে যে অস্থায়ী সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে, তা স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অথচ বিজেপির তরফে আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস মেলেনি। ফলে সাক্ষীরা বিপদের মুখে পড়তে পারেন। আমরা নতুন করে আর কাউকে হারাতে চাইছি না!’’ মিহিলাল শেখ-সহ অন্য সাক্ষীরা কেন চিনতে পারেননি অভিযুক্তদের, সে বিষয়ে বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘কী ঘটেছে, খোঁজ নেব।’’ জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি চেয়েছি। মাঝখান থেকে বিজেপি ঢুকে নাড়াচাড়া করে মামলার এমন অবস্থা হয়েছে যে, যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সাক্ষ্য বিরূপ হয়ে যাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement