(বাঁ দিকে) সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় গন্ডগোলের দৃশ্য (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করে সংখ্যালঘু ছাত্র ও যুব সংগঠনের বিক্ষোভে উত্তেজনা মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তপ্ত এলাকা। অভিযোগ, পুলিশের দু’টি গাড়িয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও ওই ঘটনার দায় রাজ্য পুলিশের দিকে ঠেললেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানার পুলিশের সঙ্গে পূর্বতন বাম সরকার আমলের তুলনা টানলেন তিনি। রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘বাম জমানায় পুলিশও কিন্তু লাঠিপেটা করেনি।’’ যদিও মঙ্গলবার জঙ্গিপুরের গন্ডগোল সামলাতে পুলিশ যে ভূমিকা নিয়েছে, তার প্রশংসা করেছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পেয়ে বুধবার ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানিয়েছেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘‘আমরা গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। অনেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে গন্ডগোল পাকিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিকে লঘু করতে চাইছে।’’
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় সংখ্যালঘু ছাত্র ও যুব সংগঠনের ডাকে আন্দোলন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল বিকেলে। জঙ্গিপুরের ওমরপুর মোড় থেকে ধুলিয়ান বাজার পর্যন্ত একাধিক জায়গায় জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে সংখ্যালঘু ছাত্র সংগঠন। কয়েক হাজার ইসলামিক সংগঠনের ছাত্রযুব বিক্ষোভে শামিল হন। তাতে অবরুদ্ধ হয় ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক। স্তব্ধ হয়ে যায় উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সড়কপথে যোগাযোগ। দীর্ঘক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তায় আটকে যায় অ্যাম্বুল্যান্স থেকে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কিছু গাড়ি। খবর পেয়ে অবরোধ তুলতে যায় পুলিশ। তখনই গন্ডগোলের শুরু। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চালায় পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। সংঘর্ষে দুই পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হন। তবে এই ঘটনায় সিদ্দিকুল্লা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এমন কিছু পরিস্থিতি হয়নি, যার জন্য পুলিশকে এ ভাবে লাঠিচার্জ করতে হবে।’’ বিক্ষোভকারীদের সংযত হওয়ার বার্তা দিয়ে মন্ত্রীর সংযোজন, “কী এমন হয়ে গেল যে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হল? আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, কলকাতায় প্রায় ৪৫ বছর আমরা ওঠাবসা করছি। নন্দীগ্রাম তো সে দিনের কথা। এমন বিক্ষোভের সময় সিপিএমের পুলিশ কিন্তু আমাদের উপর লাঠিচার্জ করেনি। এটা সত্যি কথা। আমরা সেই সুযোগই দিইনি।”
মঙ্গলবারের উত্তপ্ত পরিস্থিতির পর রঘুনাথগঞ্জ এবং সুতি থানা এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য ১৬৩ ধারা জারি করেছে পুলিশ। একাধিক ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে সবাইকে শান্ত থাকার আবেদন করা হয়েছে। ইমাম সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলা শাখার অন্যতম নেতা নিজামুদ্দিন বলেন, ‘‘আন্দোলনে হিংসা এলে পুলিশ সুযোগ পেয়ে যাবে। সংযত হয়ে আন্দোলন করতে হবে।’’ অন্য দিকে, বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, পুলিশের বাড়াবাড়িতেই এই গন্ডগোল হয়েছে। তাঁর দাবি, পরিস্থিতি সামলাতে প্রয়োজনে আধাসেনা নামানো হোক। তিনি বলেন, ‘‘একটি প্রতিবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা আমরাও (কংগ্রেস) করছি। তবে কোন প্রতিরোধ যেন হিংসার চেহারা না নেয়।’’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও আধাসেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, “আমি মুখ্যসচিব এবং মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য রাজ্যপাল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সাহায্য নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ পুলিশ স্পষ্টতই এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অক্ষম বলে মনে হচ্ছে।” পাল্টা জঙ্গিপুরের সংসদ খলিলুর রহমান জানান, ওয়াকফ নিয়ে সংসদে সরব হয়েছে তৃণমূল। তবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে নিয়ন্ত্রণ জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘জননেত্রীর উপর আমাদের আস্থা, বিশ্বাস আছে। প্রত্যেককে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, নাবালকদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হোন।’’
জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায় জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলন প্রতিরোধ যেন হিংসাত্মক রূপ না নেয়, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে আমাদের সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’’