প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের অন্য জেলার মতো মুর্শিদাবাদেও বিজেপি ও কংগ্রেস থেকে স্রোতের মত নেতা কর্মীরা হয় ফিরছেন না হয় নতুন করে তৃণমূলে যোগদান করছেন প্রায় প্রতিদিনই। পতাকা বদলও হয়ে যাচ্ছে বাছ বিছার না করেই। এখনও মুর্শিদাবাদ জেলায় বড় কোনও নেতা যদিও ফিরে আসেন নি। তবু অনেকে দলে ফিরতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও দেখা গিয়েছে।
এই অবস্থায় শুক্রবার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন দলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খান। এদিন তিনি বলেন, “যারা দলের দুঃসময়ে দল ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তৃণমূল সরকারকে বেকায়দায় ফেলে নিজেদের ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছেন, নির্বাচনের জয়লাভের পরে তাঁদের অনেকেই নানা ভাবে দলে ফেরার চেষ্টা করছেন।” যার মধ্যে অনেক পঞ্চায়েতের প্রধান, জেলা পরিষদের কর্মকর্তা আছেন বলেও দাবি করেছেন তাহের। তিনি বলেন “আমরা তাঁদের দলে ফিরতে বারণ করছি না। কিন্তু আপনারা যারা দল বিরোধী কাজ করেছিলেন, প্রকাশ্যে আমাদের জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করেছেন, আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছিলেন, তৃতীয়বারের জন্য যাতে তৃণমূল সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় না আসে তার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের পরিস্কার করে জানাতে চাই আপনারা ক্ষমা চেয়ে দলের কাছে জেলা নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন করুন। আমরা সেই আবেদন পত্র সুব্রত বক্সী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়ে দেব। তারা অনুমতি দিলে কাকে কাকে দলে নেওয়া হবে তা তারা আমাদেরকে বললে তবেই দলে যোগদানের ব্যবস্থা করব।”
তবে সেক্ষেত্রে কে কতটা মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর সমালোচনা করেছেন সেই মাপকাঠিতেই এই যোগদান হবে বলেও জানিয়েছেন তাহের। সেক্ষেত্রে অনেকে বাদও পড়তে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
একুশের নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেসে ঢোকার হিড়িক পড়েছিল জেলায়। সেই তালিকায় ছোট নেতা থেকে বড় নেতারাও ছিলেন। ছিলেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল ওরফে মধু, সহকারি সভাধিপতি বৈদ্যনাথ দাস সহ একাধিক কর্মাধ্যক্ষ। সেই সময় ঘরে বাইরে সমালোচনা সয়ে ভাঙা দল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় জিতে আসার ব্যাপারে আশঙ্কিত ছিলেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নির্বাচনের পরে মধু সহ আরও অনেকের কংগ্রেস বা বিজেপি ছেড়ে জোড়াফুলে ফেরার গুঞ্জন শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে। যাঁদের অনেকেই রাজ্য নেতৃত্বের কাছে সরাসরি যোগাযোগ করছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দল বদলুদের যাতে দলে নেওয়া না হয় সেকথা বৈঠক করে জেলা তথা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন জেলাপরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা।
খানিকটা সেই পথেই হেঁটে বলা ভাল আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁদের দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করলেন তাহের। শুধু তাই নয়, জেলা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনও নেতা বা বিধায়ককে কাউকে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিতেও নিষেধ করেছেন তাহের।
তিনি বলেন, “আপনাদের কাছে কেউ আবেদন করলে আপনারা জেলায় সেই আবেদন পাঠাবেন। আমরা সেই আবেদন রাজ্যে পাঠিয়ে দেব। দলের অনুমতি ছাড়া কেউ যোগদান করান তাহলে সেই যোগদানে অনুমতি দেওয়া হবে না। এটা গর্হিত কাজ। এটা করা যাবে না।” কলকাতা থেকে ফিরে তাহেরের এই বক্তব্যে পরোক্ষে দলবদলুদের প্রতি রাজ্য নেতাদের বার্তা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।