—প্রতীকী চিত্র।
বুধবার ছিল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের খসড়া বাজেটের সাধারণ সভা। আর সেখানে ঘরে-বাইরে আক্রমণের মুখে পড়ল তৃণমূল পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ।
এ দিন শাসক দল তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্যেরা যেমন জেলা পরিষদের কাজকর্ম নিয়ে সমালোচনা করেছেন, তেমনই বিরোধী দল কংগ্রেস এবং সিপিএমের জেলা পরিষদ সদস্যেরাও মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। জেলা পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে ‘আমরা-ওরা’র অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম এবং কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্যরা। তাঁরা ওই বৈঠকে বলেছেন, তাঁদের এলাকার কাজ যা দেওয়া হয়, সেই তুলনায় কাজ খুব কম হয়। সম্প্রতি কলকাতার নিউটাউনে জেলা পরিষদের উদ্যোগে মুর্শিদাবাদ ভবনের উদ্বোধন হয়েছে। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও তাঁদের ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন। আবার গত রবিবার লালবাগে জেলা পরিষদের উদ্যোগে পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই পিকনিকেও তাঁদের সরকারি ভাবে জানানো হয়নি বলে বিরোধী দলের সদস্যরা অভিযোগ তুলেছেন।
যদিও মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের রুবিয়া সুলতানা অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘বিরোধীরা তো বিরোধিতা করবেনই। জেলা পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে দল দেখা হয় না। জেলা পরিষদের কাজ সার্বিক ভাবে করা হয়। তাঁদের জেলা পরিষদ ভবনের উদ্বোধনের যেমন ডাকা হয়েছিল, তেমনই পিকনিকেও ডাকা হয়েছিল।’’
রুবিয়া আরও বলেন, ‘‘এ দিন বাজেট বৈঠকের পরে সাধারণ সভার বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রতিটি এলাকার জেলা পরিষদ সদস্যরা কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁরা তাঁদের এলাকার সমস্যার কথা বলেছেন। জেলা পরিষদ থেকে বিগত দিনে অনেক কাজ হয়েছে। কিছু সমস্যার কথা এসেছে। সেগুলি আমরা দেখছি। আগামী দিনেও কাজ হবে। সে জন্য এ দিন ৭৪৭ কোটি টাকার বাজেট পেশ হয়েছে।’’
এ দিন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য তথা বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা মহিলা তৃণমূলের সভাপতি ফাতিমা খাতুন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষদের কাজকর্ম এবং এলাকায় না যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সেখানে বলেছেন, এলাকার মানুষ নানা সমস্যায় পড়েন। জেলা পরিষদের মাধ্যমে নানা উন্নয়নমূলক কাজ হয়। কর্মাধ্যক্ষরা স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় গেলে অনেক উপকার হয়। যদিও পরে ফাতিমা বলেছেন, ‘‘যা বলার বৈঠকের ভিতরে বলেছি। বাইরে কিছু বলব না।’’
ওই বৈঠকে তৃণমূলের নবগ্রামের জেলা পরিষদ সদস্য কৃষ্ণচন্দ্র মার্জিত বলেছেন, ‘‘এলাকায় রাস্তাঘাট খুব খারাপ। যার জেরে এখনই মানুষের সামনে গেলে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। আগামী দিন মানুষের কাছে যেতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে।’’ পরে কৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘এলাকার সমস্যার কথা সেখানে বলেছি।’’ আবার অন্য এক তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য বলেছেন, জেলা জুড়ে সৌর বিদ্যুতের বাতিস্তম্ভ তৈরি করেছে জেলা পরিষদ। কিন্তু সেগুলো অকেজো হয়ে পড়লেও ঠিক মতো সংস্কার করা হয় না। যার ফলে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের তৃণমূলের অশেষ ঘোষ এ দিনের বৈঠকে সরব হয়েছেন। তিনি ওই বৈঠকে অভিযোগ করেছেন, সুতি ১ ব্লকের মদনা থেকে বিএসএফ ক্যাম্প পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার রাস্তার মার্চ মাসে দরপত্র হয়েছে। কিন্তু আজও সেই কাজ হয়নি। সেই রাস্তার অনুমোদন হয়েছিল। তার পরে কাজ থমকে কেন বলে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। প্রতিটি জেলা পরিষদ সদস্য যাতে তাঁদের এলাকা পিছু বছরে ১০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির প্রস্তাব দিতে পারেন, সে কথাও তিনি বলেছেন।
জলঙ্গির সিপিএমের জেলা পরিষদ সদস্য ইমরান হোসেন এ দিন ওই বৈঠকে অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘কয়েক দিন আগেই পিকনিক হয়েছে সেই পিকনিকে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আবার মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে নিউটাউনে মুর্শিদাবাদ ভবন তৈরি হয়েছে। সেই ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ও আমাদের ডাকা হয়নি।’’ তখনই সভার মধ্যে ইমরানকে লক্ষ করে এক তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্য রে রে করে তেড়ে ওঠেন বলে অভিযোগ।
জেলা পরিষদের কংগ্রেসের দলনেতা আব্দুল্লাহিল কাফিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘আমরা-ওরা’র অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্যরা বেশি গুরুত্ব পান। তবে জেলা পরিষদ কাজ করতে পারছে না। সে জন্য দেখলাম তৃণমূলের সদস্যরাও সরব হয়েছেন।’’