হুমায়ুন কবীর। —ফাইল চিত্র।
ছিল তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী। কোলাকুলি, শুভেচ্ছার বদলে সেখানে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করলেন নেতারা। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের ভরতপুরে আবার প্রকাশ্যে এসেছে দলীয় কোন্দল। তার মধ্যেই আবার বোমা ফাটালেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। লোকসভা নির্বাচনের আগে ভরতপুর-২ অঞ্চলের তৃণমূলের প্রাক্তন এবং বর্তমান ব্লক সভাপতির মধ্যে ফাটল আরও চওড়া হয়েছে। তার মধ্যেই হুমায়ুনের অভিযোগ, ব্লক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (সুমন) তাঁকে কোনও দলীয় কর্মসূচিতে বিধায়ককে ডাকেন না। বুধবার মোস্তাফিজুরকে একহাত নিয়ে তিনি অভিযোগ করেন পুলিশকে নিয়ে জোর খাটিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতেছেন উনি। সেই ভোটে জিতে হয়েছেন মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ। পাল্টা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষের কটাক্ষ, ‘‘পুলিশের উপর ভরসা রেখে আমাদের ভোটে জিততে হয় না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেবেন।’’ কিন্তু দলের বিধায়কের অভিযোগ নিয়ে কী বলবেন? সুমন বলছেন, ‘‘বিধায়ক যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত।’’ অন্য দিকে, প্রাক্তন মন্ত্রী থামছেনই না। তাঁর কথায়, ‘‘বুথে তো বিরোধী প্রার্থীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ দিয়ে বুথ ‘ক্যাপচার’ হয়েছিল। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে।’’
মঙ্গলবার সালারের কলেজ মাঠে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল তৃণমূল। সেখানে ডাক পাননি বর্তমান ব্লক সভাপতি তথা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সুমন। সেই মঞ্চ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন প্রাক্তন ব্লক সভাপতি আজাহারউদ্দিন সিজার এবং ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন। এমনকি, বিধায়ক এ-ও অভিযোগ করেন, গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে টাকা তুলে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করছিলেন ব্লক সভাপতি। এর জবাবে মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘বাজার থেকে টাকা তুলে বিজয়া সম্মিলনী করছেন বিধায়ক-ঘনিষ্ঠরা। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন বিধায়ক।’’ এই অভিযোগ শুনে ফুঁসে উঠেছেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, ‘‘সুমন একজন বাটপার। মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত। বিধায়কের বাজার থেকে টাকা তোলার প্রয়োজন হয় না। আর সিজারের যা আছে তাতে ওর টাকা তোলার প্রয়োজন পড়ে না।’’ তিনি অভিযোগ করেন, জোর করে মৎস্য কর্মাধ্যক্ষের পদ দখল করে বসে আছেন সুমন।
অন্য দিকে, চলতি মাসের ১০ তারিখ সালার হাই স্কুলের মাঠে বিধায়কের পাল্টা বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছেন ব্লক সভাপতি। তিনি জানান, ওই সম্মেলনে বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে এখনও যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বস্তুত, লোকসভা নির্বাচনের আগে জনসংযোগ বৃদ্ধি করতে বিজয়া সম্মিলনীকে হাতিয়ার করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। তৃণমূলের পক্ষ থেকেও ব্লকে ব্লকে শুরু হয়েছে বিজয়া সম্মিলনী। কিন্তু মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সেই সেই মঞ্চেও নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন।